ঢেঁকিবাহনের জার্নাল

সকাল আটটায় ফোন। হটলাইন।

আমি বেশ কিছুদিন থেকেই ভাবছিলাম স্যার এত চুপচাপ কেন। অক্টোবর তো এসেই গেল। মায়ের গোছগাছ অলরেডি শুরু হয়ে গেছে, নন্দী সিন্ড্রেলায় রুম বুক করতে গেছিল তাও হপ্তাখানেক হয়ে গেল। এখনো অল কোয়ায়েট অন বৈকুণ্ঠ ফ্রন্ট কেন! এবারে আদৌ কোনো অ্যাসাইনমেন্ট আসছে তো। ফোনটায় তাই কেমন যেন আশ্বস্তই হলাম। পর্বত ঠিকই বলে – ওয়ার্ক্যাহলিক হয়ে যাচ্ছি। ওয়েল, ড্যাম পর্বত।
‘বলুন স্যার।’
‘এক্ষুনি আসতে পারবে?’
স্যারের গলাটা যেন একটু সিরিয়াস? – ‘হ্যাঁ স্যার। দু’ মিনিট।’
আমার পুরোনো ওয়ালথার পিপিকে। ’৮৩ তে জেমস এটা আমায় দিয়েছিল। একবার চেক করে নিলাম। তারপর বেরিয়ে পড়লাম।

              *                 *                 *                  *                  *                   *  

ঢেঁকিতে আমার কোয়ার্টার থেকে বৈকুন্ঠে পৌঁছতে ঠিক বিরাশি সেকেণ্ড লাগে। বাইরে মেশিনটা পার্ক করে দিলাম। গেটে জয়-বিজয়কে দেখে কিছু আঁচ করা গেল না। অবশ্য এম. লেভেল কিছু হলে এত তাড়াতাড়ি ওদের জানার কথাও নয়…
শ্রীনারায়ণের অফিসে ঢুকে কিন্তু চমকে গেলাম। স্যারের মুখে মিটিমিটি হাসি!
‘স্যার।’
‘আসুন স্যার! বসুন।’
স্যারের এই খোশমেজাজ – নেভার আ গুড সাইন। এই হাসি, – এটা একদম আনমিসটেকেবল বৃন্দাবন ব্র্যান্ড জিনিস, এর মানে একটা কোনো গুড ফর নাথিং মিশনে আমাকে এবারে যেতে হবে। এর জন্য আমি এপিসোড নাইনের মাঝে দেখা থামিয়ে ছুটে এলাম। …কিছু বলার নেই স্যার আপনাকে।
‘কীহে নারদ, তোমার তো খবরই পাই না। আছো কোথায়?’
‘সব ঠিক আছে প্রভু।’
‘তা তো বুঝলাম। কিন্তু খবরটবর কিছু রাখো? পুজো চলে এল যে হে!’
‘হ্যাঁ প্রভু। চোদ্দো তারিখ মহালয়া।’
‘হুম।’ – নারায়ণ ভ্রু কুঁচকে একটু ভাবলেন। তারপর বললেন – ‘শোনো নারদ, তুমি হলে আমার সবচেয়ে পুরোনো, সবচেয়ে বিশ্বস্ত এজেন্ট।’ আমি ভাবছি এর পর কী আসতে চলেছে। ‘তোমায় আমি এবারে একটা স্পেশাল কাজ দেবো। কাজটা একটু অফবীট, ঠিক গড়পড়তা জব নয়। আই নীড ইওর বেস্ট ওয়ার্ক।’
‘বলুন স্যার।’
‘দ্যাখো, তুমি তো জানো, পার্বতীর সঙ্গে আমার একটা ফ্রেন্ডলি ইয়ে, মানে রাইভ্যালরি আছে। আমার কাছে খবর আছে, এবারে মর্ত্য থেকে ফেরার সময় ওরা কিছু আনপ্রিসিডেন্টেড জিনিস অমরায় ইমপোর্ট করতে চলেছে। তুমি জিনিসটা পুরো কভার করবে, বুঝলে। মিস অ্যাবসোলিউটলি নাথিং। করে আমায় সরাসরি রিপোর্ট করবে।’
‘মানে, স্যার, আমি ওঁদের ওপর….?’
‘হ্যাঁ, ফলো দেম অ্যাট অল টাইমস। যেন টের না পায়। কী, পারবে না?’
‘ভগবন্, আমি আপনার আদেশ মাথা পেতে নেব। কিন্তু মা দুর্গার গতিবিধির ওপর নজর রাখা স্যার, তাও ওনার অজ্ঞাতে, স্যার আমার ঘাড়ে স্যার একটাই মাথা। আমার সাধ্যে কুলোবে না, স্যার।’
‘আহা তুমি ভয় পাচ্ছো কেন? বললাম না, এ আমাদের একটা নিজেদের ব্যাপার, একটা খেলা বলতে পারো। যদি দুর্গা জানতেও পারে, কিচ্ছু মনে করবে না। সেসব নিয়ে চাপ নিয়ো না। দাঁড়াও, এই নাও তোমার মিশন ডিটেলস। অত মুষড়ে পড়লে কেন? চিন্তা কোরো না। শোনো ভালো করে ফাইলটা পড়ো। আর, বেশী দেরী কোরো না। বাই টেন্থ তুমি চলে যাবে। কোনো কিছুর দরকার হলে আমাকে জানাবে। ও.কে.? গুড। হোমওয়ার্কটা করে ফেলো তাহলে। হ্যাঁ। গুড লাক। এসো।’

আর আসা। মিশন যে কী সেটা তো বাইরে এসেই ফাইল খুলে পড়ে ফেলেছি। কী আর, মা দুর্গা সপরিবারে নাকি মোটরবাইক কিনছেন। মা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ। শ্রীভগবানের বাসনা, ওঁরা স্বর্গে ফেরার আগেই নিজের জন্য একটা কিনে ফেলবেন। ওনাদের ‘ফ্রেন্ডলি রাইভ্যালরি’। – আমার আর কী? স্যারই না হয় গত কয়েকশো বছরে মর্ত্যমুখো হননি, – আমি তো আর তা না! কাজ উদ্ধার করতে আমায় বিশেষ বেগ পেতে হবে না। পুজোর দিনক’টা নীচে থাকতে হবে, ব্যাস। কিন্তু এই আমার অ্যাসাইনমেন্ট? হকআইও এর চেয়ে পদের কাজ পায়… কিন্তু সে ভেবে আর কী হবে।

                *                 *                 *                  *                  *                   *  

পঞ্চমী
মা দুর্গা সবাইকে নিয়ে একটু আগে ঢুকলেন। ছেলে মেয়ে পুষ্যি মিলে লোক তো বড় কম নয়। ভোলানাথ না হয় ষাঁড় নিয়ে ঘোরেন, মা জুটিয়েছেন একটা আনট্রেনড, আখাম্বা মোষ। মহিষাসুর শরণ নিয়েছিল, ওকে ঠাঁই দিতে হবে, – তা বলে মহিষটাকে সাথে রাখার কী দরকার? মাকে বললেই বলবেন আহা, অবোলা জীব। দশহাতে অস্ত্র নিয়ে করুণাপাথার জননী। ইচ্ছে করে ‘খ্যাপার হাটবাজার’ গানটা চীৎকার করে গাই।
আজকের দিনটা মনে হচ্ছে রেস্ট। কাল থেকে বেরোবেন সবাই। চুপচাপ দেখে যাই কী হয়। তাড়াহুড়োয় আইপডটা আনতে ভুলে গেছি, রাতের দিকে একবার চাঁদনীতে ঢুঁ মারতে হবে।

ষষ্ঠী
হালচাল দেখে মালুম হয় প্রস্তুতিপর্ব শুরু হয়েছে। আড়ি পাততে হবে। সকাল সকাল ভিড়ের মধ্যে টুক করে একটা যন্তর ঘটের কাছটায় ফেলে দিয়ে এসেছি। কাস্টম মেড বাই ময়, ফর ইওর্স ট্রুলি। একশো মিটার রেডিয়াসের মধ্যে যাবতীয় ফিজিক্যাল অ্যান্ড মেটাফিজিক্যাল অ্যাকটিভিটি পিক আপ করে সরাসরি আমার ঢেঁকিতে পাঠাবে। এটা পাবার জন্য জন কনস্ট্যানটাইন পাঁচ মাস হল হত্যে দিয়ে পড়ে আছে। বিশ্বকর্মাও সিমিলার কিছু একটা ডেভেলপ করছে শুনছি, কিন্তু অমরার ব্যাপারস্যাপারে প্রচুর রেডটেপ। কাজ উদ্ধারের সময় ময় ছাড়া আমাদের লাইনে চলে না।


লাইভ ফিড:
কা: এখানে আসল জিনিস পাবে না। ইউ.এস.এ, মা। লক্ষ্মীকে বল, আমার সঙ্গে আসুক, একদম ক্লাস কাকে বলে তাই শুধু দেখবে। গিভ মি টু ডেজ। এমন জিনিস এনে দাঁড় করাব, তিন চোখে দেখে তোমার আশ মিটবে না।
ল: ও – এখন লক্ষ্মী, না? মানুষকে দোষ দিয়ে আর কী হবে, সব সমান। কাজের বেলায় কাজী কাজ ফুরোলে
দু: ওঃ, ইয়ে করিস না। শোন না, শুধু তোরা যাবি কেন, আমরাও যাই? নিজেরা পছন্দ করে কিনবো। বাড়িতে এই প্রথম বাইক কেনা হচ্ছে, একটু নানারকম মডেল-টডেল দেখাও হবে।
কা: তাহলে তো ভালোই হয়। বাইক একটা ভীষণ পার্সোনাল জিনিস, নিজেরটা নিজে পছন্দ করে কেনার চেয়ে ভালো কিছু হতে পারে না। তাহলে আমরা কাল বেরোই। এদিক ওদিক একটু ঘোরাটোরাও আছে, মেজর শোরুমগুলো একবার চক্কর মেরে নেব।
ল: ফাইন উইথ মি। সরো তুই আমার সাথে আসবি?
স: চল চল যাই যাই!
দু: তাহলে তাই ঠিক থাকল। কাল আমরা যে যার নিজের মতো বেরোব। কার্তিক, শোরুমগুলো আজ রাতে একবার আমায় বলে দিস তো। মহি, তুই কী করবি, বেরোবি?
ম: অ্যাঁ, আমি? আমি, হ্যাঁ – তা…
কা: মহিদা তুমি আমার সাথে এসো। কাল হার্লে ডেভিডসনের শোরুম যাব, তাছাড়া কয়েকটা ভালো চপ-শপের হদিস আছে, ন’শো সিসি হাজার সিসির বাইক সব, – দেখে দিল খুশ হয়ে যাবে।
ম: আচ্ছা…
স: মহিদা তুমি এতো ভীতু ভীতু হয়ে থাকো কেন বলোতো? তুমি এতদিন আমাদের সঙ্গে আছো, দাদার মতো, এখনও তোমার কমপ্লেক্স থাকা কিন্তু ঠিক না।
দু: এই সরো ওর পেছনে লাগিস না। শান্তশিষ্ট বেচারী, চুপচাপ থাকে…
স: এই যা আমি পেছনে কোথায় লাগলাম? যা-ব্বাবা –
দু: না তোমায় আর ওর সাইকোঅ্যানালিসিস করতে হবে না। নে এবারে ওদিকের কাজ সেরে ফেল সবাই। চলো চলো… অ্যাই গণেশ কোথায়? গণে-শ? গণে-এ-শ!!
ল: লাড্ডু খাচ্ছে বোধহয় কোথাও।
দু: আর লাড্ডু খেতে হবে না। ডাক্ ব্যাটাকে!


আচ্ছা, তাহলে কাল থেকে শপিং শুরু। কিন্তু ফলো করব কী করে? যা বুঝলাম, সবাই তো একসাথে বেরোবে না। সঙ্গে আর মেটাবাগ নেই, থাকলেও ওভাবে প্লান্ট করতে পারতাম না। – না, ইন্ডিভিজুয়ালি ফলো করা অসম্ভব। এখানেই স্টিক করি। কী বাইক কেনা হল তাই জানা নিয়ে তো কথা। যে যেখানেই যাক আর যাই কিনুক – জিনিসটা নিয়ে তো এখানেই ফিরবে।

পেশেন্স, ওল্ড বয়। এটা চেজ-এর সময় নয়। অ্যামবুশ ইজ দ্য নেম অফ দ্য গেম।

সপ্তমী

৭:৩০
লাইভ ফিড:
দু: তোদের ফিরতে ফিরতে ক’টা? সরস্বতী?
ল: আমরা খুব সম্ভব আজ আর ফিরব না, মা। একেবারে কালকে। যদি আজকে বাইক হয়ে যায়, কাল আর্লি ব্যাক করব।
দু: তোরা?
কা: সন্ধে হবে। আমি আর মহিদা বেরোচ্ছি। তোমার কোনো দরকার হলে কল কোরো। লিস্টটা রেখেছ তো?
দু: হ্যাঁ নিয়েছি। তোরা বেরো, আমি গণেশকে নিয়ে বেরোচ্ছি।
স: একটা কথা শোনো সবাই। অ্যানাউন্সমেন্ট! – বড়দা, ছোড়দা, তোমরা দু’জন যে যে বাইক নেবে, সমস্ত অ্যাকসেসরিজ সমেত তার পুরো খরচ লক্ষ্মী বিয়ার করবে। ভাইফোঁটার উপহার।
ল: কী?????
গ: অসাম! বড়দি, এতদিনে তোকে বেশ দিদি-দিদি মনে হচ্ছে।
দু: লক্ষ্মী মেয়ে। – আচ্ছা তোরা বেরো, আমি রেডি হই গে।
গ: আর রেডি হতে হবে না। তাড়াতাড়ি করো।


হুঁ। সন্ধ্যাবেলা জিনিসটা বোঝা যাবে। মা গণেশের সঙ্গে বেরোচ্ছেন, ওদিকে কার্তিক আর মহিষাসুর…। বার্ডস অফ আ ফেদার আর কী। কিছু একটা হেভিওয়েট জিনিস আনবে। দেবতাদের মাইরি সুবিধা আছে – ইউ.এস.এ থেকে একদিনে বাইক কিনে নিয়ে ব্যাক টু ক্যালকাটা অন রিভার হুগলি, – এ জিনিস কোনো মানুষের পক্ষে সম্ভব হত না। আর লক্ষ্মীসরস্বতী… দেখা যাক।

২০:১৫
এই রে, ঠিক যা ভেবেছিলাম। অসাধারণ, সিম্পলি সুপার্ব। এটা মানতেই হবে – কার্তিকের টেস্ট আছে। একমাত্র ডিরেক্টর নারায়ণ ছাড়া অমরায় আর কারো এতটা ভালো এস্থেটিক সেন্স নেই। অ্যান্ড হিয়ার উই হ্যাভ ইয়েট অ্যানাদার এক্জাম্পল।


লাইভ ফিড:
গ: কী জিনিস এনেছো গুরু! ইন্দ্র দেখলে জাস্ট ট্যারা হয়ে যাবে।
কা: ইন্দ্রের থেকে ওটাই এক্সপেক্টেড। সারাজীবন ভেদিয়ে ভেদিয়ে কাটিয়ে দিল। ছাড় ওর কথা। – বাইকটা দ্যাখ শুধু তুই। ইট্স আ বীস্ট! আ ম্যাগনিফিশেন্ট বীস্ট।
গ: পেলি কোথায় মালটা? এতো এমনি এমনি কিনতে পাওয়ার জিনিস নয়?
কা: নো ব্রাদার। এটা কাস্টম মেড জিনিস, সবার জন্য নয়ও। ২০১১ সালে হার্ডকোর সাইক্লসের মার্কাস ওয়াল্জ এ জিনিসটা বানিয়েছিল, – ফর দি ওয়ান অ্যান্ড ওনলি সেবাস্টিয়ান ভেটেল। ড্র্যাগস্টাইল মডেলের ওপর করা। এয়ারবক্সটা দ্যাখ এদিকে – কার্বন ফাইবার।


গ: ভেটেলের সই দেখছি…
কা: হ্যাঁ তো, ওর ২০১০-এর চ্যাম্পিয়নশিপের অনারেই তো বাইকটা করা। স্পোকেও ওর লোগো আছে দ্যাখ। – কেমন হয়েছে বল দিকি?
গ: বলার কোনো অপেক্ষা রাখে না। ব্যাপক, জাস্ট ব্যাপক। – এবারে এদিক আয়। মায়ের জন্য যেটা কেনা হল সেটা দ্যাখ।
কা: কিনে ফেলেছিস? কই, কোথায়?
গ: দেয়ার ইউ আর।
কা: সু-উ-ইট…! – কে পছন্দ করল রে, মা?
দু: কেন, মায়ের ফ্যাশন সেন্স নিয়ে ভয় ছিল বুঝি?
কা: আরে মা!! আরে দারুণ বাইক হয়েছে। – কাদের বলোতো?
দু: এটা হল ভিকট্রি জাজ্, ২০১২ মডেল। আমি বেসিকালি লালের ওপর কিছু খুঁজছিলাম, বুঝলি। এটা খুব মনে ধরল, – চালিয়ে দেখলাম – পার্ফেক্ট। ১০৬ কিউবিক ইঞ্চ ফ্রিডম ভি-টুইন ইঞ্জিন, ১১৩ ফুট-পাউন্ড টর্ক। সব মিলে আমার জন্য একদম ঠিকঠাক।


কা: সত্যিই তাই। আর রেড তো ভেরি মাচ ইয়োর কালার। দারুণ হয়েছে। আর গণেশ কিনলি না?
গ: আমি পরে কিনব। আগে তোরা কী কিনিস দেখি!
দু: মহিষাসুর কোথায়?
কা: ও কোনদিকে যেন গেল। যাক গে, ক’টা তো দিন। শুদ্ধু সোমরস খেয়ে খেয়ে ওরও তো মুখ মেরে যায়, বলো।


বুঝলাম। এটা অবশ্য প্রতিবারের ব্যাপার। প্রতি বছর পুজোর সময় মহিষাসুরের ভ্যানিশিং অ্যাক্ট। আন্দাজ ষষ্ঠী-সপ্তমী নাগাদ বেমালুম লোপাট হয়ে যাবে। তাকে আবার ফেরৎ পাওয়া যাবে বিজয়ার পর, বাড়ি ফেরার ঠিক আগে আগে। এই ক’টা দিন হয় মেছুয়া, নয় খালাসীটোলা – মদে চুর হয়ে পড়ে থাকবে। সে থাক। কোনো নুইস্যান্স না করলেই হল। ফ্রম ত্রিভুবনেশ্বর টু কচুবনেশ্বর – এ তো সহজ ডিমরালাইজেশন নয় বাবা। – সবাই কী আর ইয়ে, যে ‘ড্রিংকিং টু রিমেমবার’ করবে? মহিষাসুর ক্রনিক ডিপ্রেশনের রুগী, ওর আর বেশী রিমেমবার না করলেই ভালো। লেট হিম ড্রিংক টু ফরগেট।

অষ্টমী

দুই বোনের একজন ফিরেছে। বাইকবাহিনী সরস্বতী। সরস্বতী যে হার্লে ডেভিডসন কিনবে তা আমি জানতাম। সফিস্টিকেশন কি আর চাপা থাকে। বাইকটা মানিয়েওছে ভালো – হার্লে ডেভিডসন সুপারলো। আমার সবচেয়ে পছন্দ হয়েছে রঙটা, খুব মিষ্টি একটা টোন। ইন ফ্যাক্ট সাদা-কমলা কম্বিনেশনটা ওর রাজহাঁসের কথা মনে পড়িয়ে দেয়। খুব সুন্দর বাইক হয়েছে। সাইজেও ঠিকঠাক।
কিন্তু লক্ষ্মীর নাগাল পাই কী করে? দুর্গা জিজ্ঞেস করতে সরস্বতী যা বললো, তাতে এখন ওকে ধরা মুশকিল। NH 60 ধরে বেরিয়েছে। ‘নতুন বাইক কিনে এনে ঘরে বসিয়ে রাখলে বাইকের অপমান।’ এই বলে দিদি রাইডে বেরিয়ে গেছেন। আমি যে ফলো করব তার উপায় নেই, এখানে কাউকে থাকতেই হবে। সোলো মিশন, কাজেই দি ওনলি কাউ অ্যাভেলেবল হলাম আমি। বসে বসে জাবর কাটো। আশেপাশে অন্তত একটা ওয়াইফাই হটস্পট থাকলেও কাজ দিত।
আচ্ছা এই কাজটা কী নারায়ণ বৈকুণ্ঠে বসে করতে পারতেন না! সব দেখতে পাচ্ছেন, সব জানতে পাচ্ছেন – অথচ একটা গ্লোরিফায়েড ডেস্ক জবের বেলায় ‘কীহে নারদ’। ডেস্ক জব ছাড়া কী। ডেস্ক উইথ আ ফালক্রাম। আপাতত তিনজনের এন্ট্রি পেয়েছি। এখনো দু’জন বাকি।

নবমী
সকালে গণেশ বেরোল। লক্ষ্মীর মডেলটা জানতে পেরেছে বোধহয়, – ও তো সবারটা জেনেশুনে কিনবে বলেছিল। দেখা যাক। .. আরে, এ কী ব্যাপার, ফিড ফিড ফিড – ফিড কোথায় *

লাইভ ফিড:
কা: ও-ই-ই-ব্বাস!
দু: দ্যাখো মেয়ের কা-!
স: বলেছিলাম না?
ল: এবার দেখি – তোমরা কী কিনলে।
দু: সে দেখবি, কিন্তু তুই যে দেবরাজের হার্টফেল করিয়ে দিবি রে লক্ষ্মী। একেবারে ফায়ারব্লেড কিনে ফেললি?
ল: করুক হার্টফেল। মারা তো আর পড়বে না! আমি ঠিকই করে রেখেছিলাম – ইফ আই গেট মাইসেল্ফ হুইলস, দে’ল বী সামথিং ফাস্ট।
কা: ভালো করেছিস। নাইস।


দু: এটা কবেকার মডেল? ২০১১?
ল: ঠিক। টপ স্পীড ১৭৮ এমপিএইচ, জিরো টু সিক্সটি ইন ২.৯৫ সেকে-স। একবার এটা ট্রাই করে দেখবে, মা। ইটস লাইক রাইডিং দি উইন্ড।
দু: সে তো ট্রাই করতেই হবে। দেখেই লোভ হচ্ছে। – আচ্ছা, চ’ আমরা কী কিনেছি দেখবি।
এটা কার্তিকের।
ল: দারুণ তো রে দাদা! – না, সত্যি এ জিনিস স্পনসর করে আনন্দ আছে। এই চড়তে দিবি কিন্তু! – আর মা?
দু: আমি একটা ক্রুজার নিলাম। – ঠিক আছে না?
ল: বাঃ ব্যাপক হয়েছে। কিন্তু তোমার জন্য একটু ছোটো হয়ে গেল না? – মানে সরোরটাই তো এর কাছাকাছি সাইজ, তুমি তো অনেক লম্বা..
দু: আরে সে তো এখন। ওই পুজো-টুজোর সময় একটু যুদ্ধের চেহারায় আসতে হয়, এরা সেভাবেই সাজায় তো। বাড়িতে যে চেহারায় থাকি তাতে এটাই ঠিক হবে।
গ: লেডিজ, জেন্টলমেন! প্রেজেন্টিং – এল গ্রান এলিফান্তে !!!
স: খাইছে!
গ: কিচ্ছু খায়নি, এভরিওয়ান কাম হিদার। বিহোল্ড: দ্য হার্লে ডেভিডসন হেরিটেজ সফটেইল ক্লাসিক।


কা: ষোলোকলা পূর্ণ।
দু: দারুণ মানানসই হয়েছে তো! এই মডেলটার সামনের মাডগার্ডটা খুব সুন্দর ..
স: হ্যাঁ দাদা, মাডগার্ডটা তোর শুঁড়ের সাথে খুব ভালো মানিয়েছে!
গ: খুব যে ডায়লগ দিচ্ছিস! নিজে তো একটা বাচ্চাদের ডাকটেইল নিয়ে বসেছিস, আবার ফুটুনি।
ল: আহা, বন্ধুগণ, শুভ মুহূর্তে নিজেদের মাঝে কলহ করতে নেই। এই ভাই, স্যাডলব্যাগটা এত আর্লি নিলি যে?
গ: ওটা এমনি এমনি নয়, ওতে জিনিস আছে।
কা: কী জিনিস?
গ: সিদ্ধি। বাবা নিতে বলেছিল।
দু: তোমার বাবাটিকে এবার এগুলো একটু কমাতে বলো, বৎস। বয়স তো হচ্ছে।
গ: হোক না, বয়স হচ্ছে – বুড়ো তো আর হচ্ছে না!
দু: যাক গিয়ে যা পারে করুক। শরীরের যত্ন নিতে বললে বলবে, হ্যাঁ ঠিকই বলেছো, আচ্ছা আগে তাহলে হলাহলটা উগরে দিই। – খাক্ সিদ্ধি। – আচ্ছা গণেশ, তুই স্যাডলব্যাগটা কোথা থেকে পেলি বলতো? আমিও একটা আসলে লাগাবো ভাবছিলাম.. আসলে অস্ত্রশস্ত্রগুলো রাখতে সুবিধা হয় তো…
কা: এক কাজ করো মা, তুমি ব্যাগটা এখান থেকে লাগিয়ো না। অমরায় ফিরে বিশুদাকে দিয়ে বানিয়ে নিয়ো, ফার বেটার হবে। এখানকার এমনি স্যাডলব্যাগে তোমার সব অস্ত্র ধরবেও না।
দু: আচ্ছা, মহি কোথায়?


তাই তো, মহিষাসুর কোথায়? গুড কোশ্চেন। কলকাতায় নেই। ….. এমনটা তো হবার কথা নয়। ওর রেঞ্জ আমার জানা। তার বাইরে ও যায়না। অ্যাট লিস্ট নট আনটিল নাও। তবে কি এতদিনে সত্যিই মতি পাল্টাল? – নাঃ… বিশ্বাস হয় না। অন্য কোনো ব্যাপার।
ভাবছি মহিষাসুরকে ট্র্যাক করব। কারণ এখানে আমার কাজ তো শেষ। ফাইভ হেড্স, ফাইভ বাইকস। আর কী? নজরদারির ব্যাপার নেই, কোথাও কোনো ক্রাইসিস নেই, – এক যদি না মহিষাসুর সেটা ঘটায়। আর তাছাড়া এখানে সপরিবারে মা নিজে আছেন, কোনো কারও গণ্ডগোল পাকানোর ক্ষমতা হবে না। চয়েস পরিষ্কার। .. কিন্তু ওকে খুঁজব কোথায়?
…………..

অনেকদিন থেকে একটা ওভারসীজ জব চাইছিলাম। জুটে গেল।
এমনিতে এই রাস্তা নিতে আমি ঠিক পছন্দ করি না। কেমন যেন – ক্রুড। আমি আরেকটু ক্রিয়েটিভিটি পছন্দ করি, আর একটু ফাইনেস। – কিন্তু কাল দশমী। এখন ফাইনেসের সময় নয়। .. নেক্সট স্টপ – ফোর্ট মীড।


ফোর্ট মীড


গোটা ব্যাপারটা বের করতে আমার লাগল সাত মিনিট।
মহিষাসুর এই মুহূর্তে অন হীজ ওয়ে টু কলকাতা। সপ্তমী থেকে পুরো সময়টাই ও নিউ ইয়র্কে ছিল। কী করছিল, তারও আন্দাজ পেয়েছি। কিন্তু এর ফলআউটটা কী হয়, সেটাই দেখার। মা আশা করি ভালো মুডে থাকবেন। কারণ তা নইলে…

দশমী

লাইভ ফিড:
দু: কী রে, কোথায় ছিলি তুই এতদিন, কলকাতায় তো ছিলি না? সেই সপ্তমীর দিন কার্তিকের সাথে বেরোলি, তারপর পুরো বেপাত্তা?
ম: না, মানে আমি একটু ঘুরতে গেছিলাম, এই একটু বাইরে…
দু: তা বাবা গেছিলি, বেশ করেছিলি, কিন্তু একটু বলে কয়ে তো যেতে হয়। – যাক, কোথাও কিছু করিস টরিসনি তো?
ম: না না, কিছু –
গ: মা-আ-আ-আ? বাইরে রাখা এই পাহাড়ের মতো বাইকটা কার?
ম: এ্যাঁ?


গ: আরে মহিদা তুমি ফিরেছো! ওই বাইকটা তুমি কিনলে নাকি?
ম: না না, মানে – হ্যাঁ, মানে আমি –
দু: মহি? তুই বাইক কিনেছিস?
ম: আ-আ আমি পয়সা জমিয়েছিলাম, আমার মাসের টাকা জমিয়ে জমিয়ে ..
দু: দাঁড়াও! – গণেশ, বাইকটা ভেতরে নিয়ে এসো। কী বাইক দেখি।
গ: …. এই দ্যাখো কী বাইক। মহিদা ছাড়া এ জিনিস কারো পক্ষে হ্যান্ডল করা সম্ভব নয়। কী সাইজ মাইরি..
দু: দাঁড়াও। মহি, এটা একটা গানবাস ৪১০। কার্তিক, লক্ষ্মী, সরস্বতী – সবাই এদিকে এসো। এই বাইকটাকে ভালো করে দ্যাখো। এটা পৃথিবীর বৃহত্তম বাইক, গানবাস ৪১০। লম্বায় সাড়ে এগারো ফুট, খাড়াই পাঁচ ফুট। ওজন সাড়ে চোদ্দোশো পাউন্ড। – সবাই দেখেছ? গুড। এবার মহি তুমি আমায় বল, মাসে দশহাজার টাকা পেনশনে তুমি এই বাইক কী করে কিনলে। এই জুন মাসেই না তুমি যমের থেকে তিনহাজার টাকা ধার নিয়েছিলে? – বল কী করে কিনলে।
ম: আ-আমি অনেক দিন থেকে জমাচ্ছিলাম… আমার মামা আমাকে গাড়ি কিনে দেবে বলেছিল… সেই টাক-
গ: নো অফেন্স মহিদা, কিন্তু তোমার মামা মোষ ছিল। – ছিলেন। হোয়াটেভার।
ম: মানে ওই মামা না… অন্য-
দু: মহিষাসুর!
স: এই রে।
দু: আমি তোমাকে প্রশ্নটা দ্বিতীয়বার করব না। ভেবেচিন্তে উত্তর দাও। – এই বাইক তুমি পেলে কী করে।
ম: আম – আমি –
স: মা, আমাকে এক সেকেণ্ড দাও। প্লীজ, – কুল ডাউন। এক সেকেণ্ড।
মহিদা। তোমার ডান হাতে ওটা কীসের দাগ? ওপরে, আপার আর্ম। …. হুম। ছুরির দাগ, তাই না? দিস ইজ আ নাইফ উন্ড। – আর তুমি গত তিনদিনে একটুও নেশা করোনি। ও, পিঠেও আছে? বাঃ।
দু: কী ব্যাপার রে সরো?
স: হুঁ। কী ব্যাপার। মহিদা? বাইকটা কী জেতার পয়সায় কিনলে, না ওটাই বেট ছিল?
ম: অ্যাঁ!
স: অ্যাঁ না, হ্যাঁ। সবই বুঝেছি, চ্যাম্পিয়নবাবু। নেটটা খুলে বসলে বাকিটাও বুঝে ফেলব। কিন্তু নিজের কীর্তির বৃত্তান্তটা নিজে মুখেই বলো না? ভালো লাগবে।
কা: কেসটা কী রে?
স: বোঝোনি? ফাইট করে জিতেছে, ফাইট! টাকা লাগিয়ে ফাইট। এতদিন আমেরিকা যাচ্ছো, ওর অত কালারফুল আন্ডারওয়ার্ল্ডটা এক্সপ্লোর করোনি? কীসে জিতলে মহিদা, স্ট্রীটফাইট?
ম: …হ্যাঁ।
দু: মানে? এই আমায় সব পরিষ্কার করে বলোতো? কী হয়েছে? মহি তুই বাইকটা স্ট্রীটফাইট করে জিতেছিস? আঃ, অত ঘাবড়ানোর কী আছে? কী ব্যাপার বল।
ম: আমার অনেকদিনের শখ… একটা ভালো মটোরসাইকেল কেনার.. সেই ২০০৪ থেকে খুব ইচ্ছা… টাকায় কুলায় না, – এবারে সবাই মটোরসাইকেল কিনছে, আমি ভেবেছিলাম যে করে হোক কিনবই.. রোজগার করব.. কার্তিকদার সাথে অ্যামেরিকা গেলাম, শুনলাম ওখানে ম্যাচ হয়, লড়ে জিততে পারলে ভালো টাকা দেয় – তাই …..
দু: বুঝলাম। কী আর বলব। ওখানে একটা বিপদে পড়লে তোর কী হত জানিস? তোর অমৃত নেওয়া নেই, শুক্রাচার্যকেও সবসময় পাওয়া যায় না। যে আড্ডায় গেছিলি, প্রাণ নিয়ে ফিরেছিস ভাগ্য ভালো। মারামারিতে না হয় বেরিয়ে গেলি, ঝামেলা লেগে যেত যদি? বাই চান্স কোনো মহিলা তোকে বেমক্কা একটা গুলি বা কিছু যদি করে বসত? ওদের দেশে একা ওভাবে বেরোবি না রে বোকা! দিনকাল অনেক পালটেছে। – আর হ্যাঁ, এই যে বাইকটা জিতেছিস, এটা লিগ্যাল তো?
গ: অফ কোর্স ওটা লিগ্যাল নয়, মা! ছেড়ে দাও তো, যস্মিন দেশে যদাচারঃ। ওদেশে এরকম ইলিগ্যাল জিনিস জলভাত। তাছাড়া আমরা হিউম্যান তো নই, – মানুষের আইন আমাদের ওপর খাটে না। এই যে আমরা দুম করে ওদেশ থেকে এদেশ বাইকপত্র নিয়ে চলে এলাম, এটাও কি লিগ্যাল?
কা: চাপলেস থাকো, মহিদা, – অমরায় পৌঁছে গেলে আর তোমাকে পায় কে? কৈলাসে চিরকাল নো এক্সট্রাডিশন, একবার বাড়ি গিয়ে উঠলে কেউ আর তোমাকে ছুঁতেও পারবে না।
দু: তাহলে তো সব মিটেই গেল। যা, বাইকটা তুলে ফেল, আজ সন্ধেয় তো বেরোনো। – আচ্ছা লক্ষ্মী, একবার আমার সঙ্গে চল তো মা।
ল: কোথায় যাবে এখন?
দু: এই তোদের বাবার জন্যে একটা জিনিস নেবো রে মনা। একটু সঙ্গে চল, দেখেশুনে আনবো!
স: কী জিনিস? বাইক?? – মা আমিও যাবো!!!
দু: চ’, যাবি তো। পছন্দ তো করেই এসেছি – একটা হার্লের রোড কিং। শুধু একটু সাজিয়ে গুছিয়ে নিয়ে আসা। একা একা ঘুরে ঘুরে বেড়ায়, একটা সাথী পাবে আর কী। বাউণ্ডুলের বাইকের চেয়ে বড় বন্ধু আর কে আছে।
ল: আরে, চলোও! – ভালো ভালো ইয়েগুলো সব মানে একদম শেষ মুহূর্ত অবধি পেটে চেপে রাখবে! চলো চলো!…….

..

কা: ব্রাদার!
গ: ইয়েস দাদা।
কা: তাহলে কী বুঝলি বল তো।
গ: কী দাদা।
কা: বুঝলি এই, যে হাত ঘুরালে নাড়ু পাবে, নইলে নাড়ু কোথায় পাবে।
গ: কী বলছিস একটু খোলসা করে বল দেখি?
কা: কী আর বলব। সপ্তমীর দিন বাইক দেখতে বেরিয়ে মহিদা আর আমি একটা শোরুমে হার্লের কাস্টম মডেল দেখছিলাম। সেখানে একটা ব্ল্যাক কাস্টম ভি রড দেখে প্রচুর পছন্দ হয়েছিল। খোঁজ নিয়ে শুনলাম বাইকটা অলরেডি সোল্ড। বায়ার কে জিজ্ঞেস করায় বলল, – এস. শঙ্কর, কলকাতায় ডেলিভারী নিচ্ছে অন টেন্থ নভেম্বর।


গ: টেন্থ নভেম্বর, মানে তো…?
কা: হ্যাঁ রে ভাই। এস. শঙ্কর নামটা সেদিন খেয়াল করিনি। ডেটটাও না। আজকে এই দেখে মনে পড়ল।
গ: তার মানে, এ বাবা, – হি হি হি হি হি হি
কা: আর হেসে দাগা দিস না ভাই। খুব ইচ্ছে হয়েছিল বাইকটা কেনার। – এইভাবে কেড়ে নিল মাইরি। আফটার অল ছেলে হই!
গ: আরে, চিয়ার আপ। মা আর ওসব কখন চাপবে? ও আমাদেরই ভোগে লাগবে দেখিস। সারাদিন হার্লে চেপে ঘুরে বেড়াবো।
কা: হোপ ইউ আর রাইট, ব্রো। হোপ ইউ আর রাইট।


একাদশী

কাল রাতে মা দুর্গা সদলবলে কৈলাস ফিরে গেছেন। সাথে গেছে সাতটা বাছা বাছা, হ্যান্ডপিক্ড মোটরসাইকেল। আমি কাল রাতেই আমার ফুল রিপোর্ট বৈকুণ্ঠে পাঠিয়ে দিয়েছি। আজ সকালে ডিরেক্টর আমাকে ফোন করেছিলেন। হী সাউণ্ডেড হ্যাপি। জিজ্ঞেস করলেন আমি নিজের জন্য একটা বাইক চাই কিনা। আমি ডিক্লাইন করেছি। আমার তো নতুন বাহনে দরকার নেই।

…সাইবারট্রন থেকে ফেরার সময় প্রাইমা বলেছিল, – এমন করে দিলাম, দেখবে, তোমার ডিরেক্টর তো নয়ই, তুমি নিজেও দেখে বিশ্বাস করতে চাইবে না, যে এর মধ্যে এই ক্ষমতা আছে। ইউজ দ্য স্পার্ক ওয়েল। …. – আশা করি আমি কথা রাখতে পেরেছি। এতদিনে অনেকটা পথ পার করে এলাম দু’জনে। জল, স্থল, অন্তরীক্ষ – কোথায় যাইনি। অগম্য কোনো জায়গা তো আমার নেই। আর পুরো সময়টা এ আমার সঙ্গী থেকেছে। অল দিজ ইয়ার্স। অ্যান্ড এভরিটাইম আই মাউন্ট হিম, আই স্টিল ফিল লাইক আ টিনএজার অন হিজ ফার্স্ট লং রাইড।

একটা লম্বা ছুটি চেয়ে নিলাম আজ। আর ভালো লাগছে না। কিছুদিনের জন্য উধাও হব। কোথায় যাব জানি না। জ্যান্ডার, ওআ, অ্যাসগার্ড। দেখা যাক।

পথের প্রান্তে আমার তীর্থ নয়, পথের দু’ ধারে আছে মোর দেবালয়।

নারদ সাইনিং অফ।


……………………………………………………………………………

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *