মাঝে মাঝে কিছু প্রশ্ন মাথায় আসে। তাদের জবাব আমি ভেবে পাই না। হঠাৎ হঠাৎ, তুচ্ছ কারণে বা অকারণেই, মাথায় এরা চাড়া দেয়। এর কয়েকটা অনেকদিন থেকেই এরকম হানা দেয়, কয়েকটা আবার নতুন। মাঝে মাঝে আবার আমি কোনো কোনোটার উত্তর নিজেই ভাবতে ভাবতে পেয়ে যাই। কিন্তু আবার ভুলেও যাই। পরের বার আবার যখন কথাটা মনে হয়, আবার সেই ধন্দে পড়ে যাই।
যেমন, একবার স্কুলে যখন পড়ি, তখন মনে হয়েছিল A-র নাম A কেন, B-র নাম B কেন। ওইটা বি আর এইটা এ-ও তো হতে পারত। হল না কেন? এইসব ভাবলে তো আর স্কুলে চলে না। পরে দেখলাম এটা নাকি বেশ ভারী একটা দার্শনিক গোছের তাত্ত্বিক ব্যাপার, স্ট্রাকচারালিজম-টিজম নানা জাঁদরেল ব্যাপার আছে এর। সে আরেক এলাহি কাণ্ড। তারপর আবার দেরিদা বলে এক বিশাল লোক সে আরো প্যাঁচালো ঘটনা আবিষ্কার করেছে। দেরিদা-দেরিদা শুনে শুনে কলেজজীবন কেটে গেল, কিন্তু সে যে ঠিক কী করেছে তা আর কেউই ভালো করে বোঝাল না। সবাই খালি ‘হুঁ হুঁ বাবা, দেরিদা।’ এইজন্যেই তো আমরা আজও পরাধীন! পরে দেখলাম দেরিদার জন্য সবচেয়ে ভালো সুতো হল হাবুল সেনের ভাউয়া ব্যাং। ঢাকাইয়া বাঙ্গাল, তাকে টেনিদা যতবারই জিজ্ঞেস করে ভাউয়া ব্যাং মানে কী, হাবলা খালি বলে ‘ভাউয়া ব্যাঙের মানে হইল গিয়া ভাউয়া ব্যাং।’ মার খেতে যায়, তাও তার আর কোনো উত্তর জোগায় না, মানে সে রীতিমত অসহায়। এইবারে বোঝা গেল। ভাউয়া ব্যাং মানে ওই ভাউয়া ব্যাং। এর বেশী বলতে গেলেই আর মানে বোঝানো যাবে না, সুড়ুৎ সুড়ুৎ করে পিছলে পিছলে যাবে। যাইহোক এসব নাহয় গেল।
কিন্তু ABCD নিয়ে আরো একটা কথা আমার এখন মনে হয়, মানে অনেকদিন থেকেই হচ্ছে, যে এই যে এবিসিডিইএফজিএইচাইজেকেএলেমেনোপি, এই যে এইভাবেই এই অর্ডারেই শেখানো হয়, এর মানে কী? একটা মানে না হয় মানলাম, যে একটা বাঁধা ছক থাকলে মুখস্থ করতে সুবিধা হয়। কিন্তু সেই সুবিধা ছাড়া, ওই গৎটার আর কোনো কাজ আছে না নেই? যদি কোনো বাচ্চা এইভাবে শেখে, Q W E R T Y U I O P ইত্যাদি, অর্থাৎ কীবোর্ডের সাজটাই ধরলাম, তাহলে তাতে তার শেখার কিছু কমবেশী হবে কি? সে সবগুলো বর্ণ তো ঠিক ঠিক ভাবেই জানল। – এর উত্তর, আমার যতদূর মনে পড়ছে একবার কী যেন একটা মনে হয়েছিল, নাকি হয়নি, কে জানে। মোট কথা আপাতত আমি অন্ধকারে। হয়তো কেউ খুব সহজেই বুঝতে পারবে, একদমই জলের মতো কথা এটা। কিন্তু, ঘিলু ঘুলিয়ে গেলে কী আর করা।
তারপর আরও আছে। এই একটু আগে, মাছের ঝোল দিয়ে ভাত খেতে খেতে, টিভি-তে দেখলাম একজন একটা অনুষ্ঠানে মাইকে কী যেন পাঠ করছেন, নাম দেখাচ্ছে রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। আমি রাজ্যপালের নাম জানতাম না। টিভি দেখে জানলাম, ও আচ্ছা তাই, বেশ। এবার মনে হল, আচ্ছা এই যে আমি রাজ্যপালের নামটা জানতাম না। এতে কী হানি ছিল? আমি তো কোনোদিন টেরও পাইনি যে আমি রাজ্যপালের নামটা জানি না। তারপর ভেবে দেখলাম এই যে স্কুলে ছাত্রদের জি.কে-তে এই নানারকম জিনিস জানানো হয়, সেগুলো মুখস্থ করে পরীক্ষায় লিখতে হয়, তার মধ্যে এইসবও থাকে। ভারতের প্রধানমন্ত্রীদের নাম, রাষ্ট্রপতিদের নাম, এগুলো জানতে হয়, কালানুক্রমিকভাবে। এগুলো জেনে কী লাভ হয়? নিশ্চয়ই এর একটা উত্তর আছে, কিন্তু এই ভরা পেটে আমার মাথায় সেই উত্তর আসছে না। হবে হয়তো কিছু। আবার পরে ইন্টারনেটে দেখলাম, রাজ্যপাল যিনি, তাঁর নাম কেশরী নাথ ত্রিপাঠী, কেশরী আর নাথ আলাদা আলাদা, একসাথে নয়। তাহলে কি বরং টিভিতে দেখে না শিখলেই আমার ভালো ছিল। ধোঁয়াশায় পড়ে গেলাম।
এর সাথে একটা বিতর্কিত প্রশ্ন জুড়ে দিই কারণ টিভিতে তলার ব্যানারে লেখা দিচ্ছিল – আবার নেস্লের বেবিফুডে ছত্রাক পাওয়া গেছে, আরও নানা কিছুতে নানারকম কীসব পাওয়া গেছে। প্রশ্ন হল এগুলো এতদিন ছিল কোথায়? – যাইহোক এগুলো বিপজ্জনক প্রশ্ন, নিরীহ কথায় ফিরি।
একবার ক্লাসে স্যার পড়াচ্ছিলেন অলঙ্কার। দ্য ক্যামেল ইজ দ্য শিপ অফ দ্য ডেজার্ট – মেটাফর, কারণ সমুদ্রে জাহাজ যে কাজ করে মরুভূমিতে উট সেই কাজ করে, কমন কোয়ালিটি বিইং ‘ওনলি মীনস অফ ট্রান্সপোর্ট’। আমি ক্লাস হয়ে গেলে স্যারকে আলাদা হয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম, যে যদি বলি দ্য শিপ ইজ দ্য ক্যামেল অফ দ্য সী, তাহলে সেটা টেকনিক্যালি ঠিক হয় কি না। আমি ছ্যাবলামি করে এটা জিজ্ঞেস করিনি, স্যারও বিরক্ত হননি, বলেছিলেন ‘ইট উড বী টেকনিক্যালি কারেক্ট, বাট ইট উড সাউন্ড ভেরী স্ট্রেঞ্জ!’
এইরকম প্রশ্ন আরো কয়েকটা আছে আমার, এখন সব মনে পড়ছে না। কয়েকটা প্রশ্ন আবার উচ্চকোটীর প্রশ্ন, চিরকালই মানুষকে ভাবাচ্ছে। ‘প্রেম কী’ বা ‘ এ জীবন লইয়া কী করিব’, এইগুলো। এসব নিয়ে কথা হচ্ছে না। এদের ক্ষেত্রে উত্তর ব্যাপারটা গৌণ, প্রশ্নটা আর প্রশ্নটা করাই আসল। যদিও পরেরটায় একটা উত্তর পাওয়া গেছে, ‘হোয়াই আর উই হীয়ার’-এর জবাবে জর্জ কার্লিন সাজেস্ট করেছেন, ‘প্লাস্টিক, অ্যাসহোলস!’ হতেই পারে। ভিডিওটা দেখলে বোঝা যাবে, ইউট্যুবে পাওয়া যায়।
আজেবাজে মনে হলেও এই কথাগুলো, আর এর বাইরেও কয়েকটা, আমার মনে হয়; আমি নিশ্চিত এদের জবাবও আছে, কয়েকটা হয়তো সাধারণ কমনসেন্স, কয়েকটা হয়তো আরো বিদগ্ধ জ্ঞানী হলেই জানতে পেরে যেতাম। আপাতত ফেসবুকেই দিলাম। কেউ জানলে জানাবেন। আর যদি আপনিও এর উত্তর খুঁজছেন এমন হয়, তাহলে ভরসা রাখুন, আপনার মতোই আমিও আছি, আরও অনেকেই আছেন হয়তো বা, একদিন কেউ না কেউ ঠিক খুঁজে পাবে, পেয়েই যাবে!