একটি তর্কের এক টুকরো

এখানে দুইধরনের মানুষ দেখা যাচ্ছে, যাদের জীবনে কোনোধরনের সংশোধনমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যাপারে দু’রকম দৃষ্টিভঙ্গী।


একজনের মতে, সামনে অন্যায় দেখলে পেলেই সাথে সাথে প্রতিবাদ করব। হাতের কাছে নোংরা ঘটনা ঘটছে, দেখলেই হাত বাড়িয়ে আটকাব। আগে কোথাও পেরেছি কি পারিনি, বা পরে কোথাও পারব কি পারব না, অত ভাবব না। এখনকারটা এখন সামলাব।

অন্যজনের মতে, কোনো কিছুর ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে হলে সেইধরনের যত যা কিছু ঘটনা ঘটেছে, সেই সমস্তকে আওতায় এনে সেই সমস্তগুলোর বিরুদ্ধে কদম ওঠাতে হবে। যদি সবগুলোতে নিজেকে জড়ানো না যায়, তাহলে কোনোটাতেই জড়ানো উচিত না। অল অর নান। হয় সবগুলোতে হাত দাও, নয়তো কোনোটাতেই দিও না।

শারদ্বত প্রথম দলে। আমিও প্রথম দলে।

কেউ কেউ আবার দ্বিতীয় দলে।

আমার মনে হয় দ্বিতীয় দলের যা যুক্তি, তা একেবারেই কাঁচা এবং অর্থহীন। তার প্রমাণ এই যে ধবলদা সারা ফেসবুকের সমস্ত পোস্ট চষে যত পোস্টে চরম দক্ষিণপন্থী রাজনীতির নিন্দা করা হয়েছে তার সবগুলোতে কমেন্ট করে তর্ক করছেন না। ধবলদা তর্কটা এই একটা পোস্টেই কর‍েছেন, হয়তো আরো কয়েকটা পোস্টে করছেন যেগুলো তাঁর নজরে পড়েছে। কিন্তু তাঁর নিজের নিয়মমতে, হয় তাঁর ওই সমস্ত হাজার হাজার পোস্টের সবগুলোতেই গিয়ে কমেন্ট টাইপানো উচিত, কারণ অল অর নান। অথবা কোনোটাতেই নাক গলানো উচিত নয়। কারণ অল অর নান।

আমার বা শারদ্বতের কোনো চাপ নেই কারণ আমরা তো এটাই মনে করি যে যা সামনে দেখব সেটায় হাত দেব। কাজেই আমরা যে এখানে কমেন্ট করছি, আরো দুশো জায়গায় করছি না, তাতে কোনো অসুবিধাই নেই। উই ডোন্ট ডিসপ্রুভ আওয়ারসেলভস।

গল্প এখানেই যদিও শেষ, তাও হাজার হোক মার্ভেলের জমানা। পোস্ট ক্রেডিট সীন ১:

‘জিন্স প্যান্ট পরে দেবালয়ের মতো পবিত্র স্থানে অর্ঘ্য নিয়ে’ যাওয়ার ব্যাপারে অসুবিধা কী? এই লাইনে প্রথমত ইঙ্গিত যে দেবতা নামক ধারণাটি মানুষ এবং প্রকৃতি থেকে স্বতন্ত্র এবং ভিন্ন; কেনোপনিষৎ যদিও বলছে যে “যদ্বাচানভ্যুদিতং যেন বাগভ্যুদ্যতে তদেব ব্রহ্ম ত্বং বিদ্ধি নেদং যদিদমুপাসতে।।” যা কথায় প্রকাশ করাই যায় না, বরং যার দ্বারা কথা প্রকাশিত হয়, তাকেই ব্রহ্ম বলে জেনো; যাকে আপনা হতে ভিন্ন বলে মনে করে উপাসনা করা হয় তা ব্রহ্ম নয়। – যাইহোক। দ্বিতীয়ত ইঙ্গিত যে এই দেবতাদের জন্যে আলাদা আলয় হয়; সে আলয় বানায় যদিও মানুষে, তাতে থাকেন দেবতারা। (দেবতারা তাদের আলয় কখনো কখনো ভক্তদের বিশেষ ধরনের ফুর্তি করবার জন্য ভাড়া দেন কি না সে নিয়ে কোনো কথা বলা নেই বা বলা থাকলেও বোঝা যাচ্ছে না)। তৃতীয়ত বলা হচ্ছে যে দেবালয় স্থান হিসেবে পবিত্র, যেখানে কিছু বিশেষ জিনিস, যেগুলো অপবিত্র, তা পরে গেলে সেটা দোষের। অনেকটা নোংরা কাপড় পরে স্যানিটাইজড ঘরে ঢোকার মতো। এখানে কথা হল, কোন পরিচ্ছদ অপবিত্র তার বিচার কে করছে? আমি যদি মেয়ে হই আর ব্রেসিয়ার-ব্লাউজ ছাড়া শাড়ী পরে মন্দিরে যাই, তাহলে সেটা কি দোষের? কারণ সারদাদেবীর ছবি সবাই দেখেছে এবং তাতে ব্লাউজ নেই। শাড়ী না হয়ে যদি টিশার্ট হত তাহলে কি দোষের হত? শকুন্তলা যা পরতেন তাতে তাঁর কাঁধ-পেট-কোমর-হাঁটু-জঙ্ঘা-পায়েরপাতা সবটা পরিষ্কার দেখা যেত। তাতে কি আশ্রমিক পরিবেশের ব্যাঘাত ঘটত?

এসব ফালতু কথা কাটাকাটি খুবই নিম্নস্তরের বিতর্ক, এসব করে কোনো লাভ নেই। মূল্যবোধ নিয়ে তর্ক চলে না। সুস্থ বোধের মানুষ যাঁরা তাঁরা সবাই বোঝেন কীসে কী। বাকিরা বোঝেন না।

পোস্ট ক্রেডিট সীন ২:
‘আমাদের দেশে এটা পূর্বপুরুষেরা বন্ধ করেছে ধর্মের জন্য নয় বৈজ্ঞানিক কারণে-‘ – এটার কোনো ভিত্তি নেই। প্রথমত আধুনিক বিজ্ঞান বলতে যা বোঝায় তা প্রাচীন যুগে ছিল না। বৈজ্ঞানিক কারণ বলতে এখানে যে জৈবরাসায়নিক কারণের কথা বলা হয়েছে, তার ধারণা থাকা স্বাভাবিক কারণেই সে আমলে অসম্ভব ছিল, যেমন অসম্ভব ছিল ডিজিটাল ফোটোগ্রাফি। এটা কোনো ডিসক্রেডিট নয় বৈদিক যুগের। – যাক। কথা হল গরু প্রাণীটা বিবর্তিত হয়েছে গৃহপালিত প্রাণী হিসেবে। ক্যানিস লুপাস ফ্যামিলিয়ারিস যেমন বুনো হয় না, তেমন বস টরাস কখনো বুনো হয় না। পাওয়াই যায় না। কারণ এদের প্রজাতিগত উৎপত্তিই মানুষের হাতে, মানুষের সাথে মানুষের ভোগে লাগবার জন্য। (ভোগ বলতে শুধু খাওয়া বোঝাচ্ছি না) গরুর মাংস একটা স্টেপল ডায়েট ছিল। সেসব বন্ধ হবার পেছনে বৌদ্ধধর্মের নীতির হাত অনেকখানি ছিল, যেমন হিন্দুধর্মে দেবতাদের ‘আলয়’ বানানোর ধারণা গ্রীকদের থেকে বৌদ্ধধর্ম বেয়ে এসেছিল। কোনো বৈদিক ঋষি সায়েন্স কষে নিউট্রিশনাল ভ্যালু অ্যানালাইজ করে গোমাংস বন্ধ করেননি।

পোস্ট ক্রেডিট সীন থ্রি: জ্ঞান এবং নীতিকথা আমরা অনেক পড়ি এবং জীবনে পালনও করি। লেট এভরিওয়ান স্পীক ফর দেমসেল্ফ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *