মেসের গল্প

*
*
*

“ধর আমরা সবাই একটা বিরাট বড় মেসবাড়িতে থাকি। বহু বছর ধরে থাকি, জেনারেশনের পর জেনারেশন ধরে থাকি। এবার, দেখা যায় যে প্রতি জেনারেশনেই ১০% করে লোকের একটা খারাপ অসুখ হচ্ছে। পরীক্ষা করে দেখা গেল যে অসুখটা হচ্ছে খাবার জলের থেকে। – এবার, সারা বাড়িতে অনেকগুলো জলের কল আছে যেগুলো থেকে আমরা জল খাই। সবার তো অসুখ হয় না, কয়েকজন নিশ্চয়ই এমন কিছু কলের জল খায় যেগুলো দিয়ে দূষিত জল আসে? তাহলে যদি আমাদের এই অসুখ নির্মূল করতে হয় তাহলে কী করতে হবে? – কোন্ কোন্ কলগুলো থেকে খারাপ জল আসছে সেগুলো সনাক্ত করে, সেগুলোকে সীল করে দিতে হবে। তাই না? তাহলেই তার পর থেকে কারো আর ওইধরনের অসুখ হবে না।”


আজকে সোমবার, সপ্তাহের শুরু। আমার অ্যাজেন্ডায় ছিল, আজ যত ক’টা ক্লাসে সম্ভব আসিফাকে নিয়ে কথা বলতে হবে। এদের মধ্যে এখন থেকে অ্যান্টিভাইরাস ইন্সটল না করলে নয়।

ফার্স্ট পিরিয়ড ছিল এইটে। তারপর ধীরে ধীরে টেন, নাইন। ক্লাস সেভেনে কিছু বলিনি কারণ এরা এসব কথাবার্তায় অভ্যস্ত নয় একেবারেই, ইংরেজী ক্লাসেও মোটামুটি স্পুনফিডিংএর ওপরেই চলে। এসব পাড়লে ভড়কে যাবে, হিতে বিপরীতের সম্ভাবনা। আরো ক’দিন যাক।

অ্যাটেনডেন্স নিয়ে ক্লাসকে শান্ত করিয়ে প্রথমে জিজ্ঞেস করলাম, “তোরা কে কে খবর ফলো করিস?”

কয়েকটা হাত উঠল, কয়েকজন এদিকওদিক মুখ চাওয়াচাওয়ি। আমি নিজেই আবার বললাম, “আচ্ছা আইপিএল হচ্ছে সেই খবর কে কে জানিস বল।” এবার সাড়াশব্দ পাওয়া গেল, প্রায় সবাই লম্বা করে হাত তুলেছে। – হাত নামাতে বললাম। তারপর জিজ্ঞেস করলাম, “হাউ মেনি অফ ইউ নো অ্যাবাউট আসিফা?”

সবাই নয়। তবে কয়েকজন হাত তুলল। জানে তারা আসিফার নাম। শুনেছে। আমি বললাম, “আচ্ছা ঠিক আছে। আমি বলছি আসিফার কথা। যারা জানিস না শোন।” তারপর শোনালাম।

ক্লাস চুপ। মুখ বন্ধ। একটু ফ্যাকাশে? এর আগে কোনো টীচার ওদের সাথে ক্লাসরুমের ভেতর এই ধরনের আলোচনা করেনি।

বললাম যে রেপ হয়েছিল। রেপের সমর্থনে মিছিল বেরিয়েছিল, জাতীয় পতাকা সমেত – বললাম। সেই মিছিলে শুধু পুরুষ নয় মহিলারাও হেঁটেছিল, বললাম।

বললাম যে দ্যাখ, এসব খবরে আহত হতে পারিস, ক্রুদ্ধ হতে পারিস, ভয় পেতে পারিস; কিন্তু অবাক হওয়ার কিন্তু কিছুই নেই। কারণ আমরা আছি এমন একটা দেশে যেখানে প্রতি তিরিশ মিনিটে একটা করে রেপ হয়। তোরা কখন স্কুলে এসেছিস? আটটায়? এখন বারোটা বাজে। আটজন মানুষের রেপ হয়ে গেছে এদেশে, তোরা আজ স্কুলে পা দেবার পর থেকে। সুতরাং একটা ছোট মেয়ের রেপ হয়েছে, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। সর্দিলাগা মানুষের হাঁচি হওয়া যেমন স্বাভাবিক ভারতবর্ষে রেপ হওয়া তেমনই স্বাভাবিক। কিন্তু স্বাভাবিক হলেই সেটা মেনে নেওয়ার মতো হয় না। অবাক না হলেও অন্য অনেক কিছু হতে পারি এই সব খবরে। – এই বলে ওদের জিজ্ঞেস করলাম, – তোরা বল, যখন এই সমস্ত খবর শুনিস, তোদের কেমন লাগে?

চুপ করে থাকল খানিকক্ষণ। আমি একটু ঠেলা দিতে কয়েকজন মুখ খুলল। অ্যাংরি, ডিসগাস্টেড, স্যাড। শকড।

আমি বললাম, দ্যাখ আমি যে তোদের এই নিয়ে কথা বলছি, তোদের সবার মুখগুলো আমি দেখতে পাচ্ছি। আমি দেখতে পাচ্ছি যে তোরা কেমন পাংশু হয়ে গেছিস, স্তব্ধ হয়ে গেছিস এইসব কথায়। অ্যান্ড আই অ্যাম গ্ল্যাড দ্যাট ইট ইজ সো। কারণ তোরা শকড হয়েছিস এইজন্যেই যে তোদের মন এখনো জ্যান্ত। সুস্থ। নরম, স্পর্শকাতর। আমি কখনো সিগারেট খাইনা বলেই আমি কখনো ধোঁয়ায় টান দিলে আমার খক্‌খকিয়ে কাশি উঠবে, আমার ফুসফুস রিজেক্ট করে দেবে সেই কর্কশ ধোঁয়া, ঠেলে বাইরে বার করে দেবে। যার ফুসফুস অলরেডি কালো, তার কোনো অসুবিধে হবে না। তোদের যে এই কথা শুনে এই অসুবিধে হচ্ছে, দ্যাট প্রুভস ইউ আর হেলদি। আমি যদি এই একই কথা বাজারে গিয়ে একদল অ্যাডাল্ট লোককে শোনাতাম, তারা মুখ ফিরিয়ে পাশ কাটিয়ে নিজের কাজে চলে যেত। কারণ তারা অলরেডি ডিসেনসিটাইজড। তাদের আর গায়ে লাগে না। তোদের লাগছে। আমি চাই তোরা যতদিন বাঁচিস ততদিন এইসব কথা তোদের গায়ে লাগুক। বিঁধুক।

তোরা ভাবতে পারিস, একদল লোক একটা প্রকাশ্য মিছিল বের করল, খোলা রাস্তায়, ইন সাপোর্ট অফ রেপ?? তারা কোথা থেকে এত সাহস পায়? কীভাবে এত হিম্মৎ হয় তাদের? তোদের কী মনে হয়?

তারা সাহস পায় কেন জানিস, কারণ তারা জানে, যে এই ‘ভালোর দল’ মুখ ফুটে একটি কথাও বলবে না। তারা কাতর হবে, দুঃখিত হবে, শোকস্তব্ধ হবে, ক্ষুব্ধ হবে, কিন্তু কেউ কথা বলবে না এই নিয়ে, আওয়াজ তুলবে না, আঙুল তুলবে না একটাও। তাই আমরা যদি একশোজনও হই আর ওরা মাত্র পাঁচজন, তাহলেও ওরা ওই পাঁচজনে মিলে চিলচীৎকারে আকাশ ফাটাবে, কারণ আমাদের গলা কোনোদিনই শোনা যায় না।

সো টক টু মি নাউ। আমি তোদের কয়েকটা প্রশ্ন করব, তোরা আমাকে তার জবাব দে, যা তোদের মনে হয়, মুখ খুলে তাই বল।

ধর ওই যে মিছিল, যে মিছিলে মানুষ রেপের সমর্থনে হেঁটেছে। ওই মিছিল থেকে যদি যেকোনো একজন লোককে আমি তোদের সামনে নিয়ে আসতে পারি, – হোয়াট উড ইউ আস্ক দ্যাট পার্সন?

সেই লোকটাকে তোরা কী প্রশ্ন করবি?”
উত্তর দিল কয়েকজন, কী প্রশ্ন করবে তারা। সব মিলে সেই সমস্ত প্রশ্নের সার একটাই – “হোয়াই????????”

কেন????? কেন করলে এ জিনিস? কেন চাও এ জিনিস? হোয়াই???

আমি শুনলাম। তারপর বললাম, – বুঝেছি। সত্যিই, আর কীই বা জিজ্ঞাস্য থাকতে পারে? ইটস সিম্পলি আ বিগ ব্ল্যাক ‘হোয়াই’।

আচ্ছা এবার বল, তোদের এই হোয়াইয়ের জবাবে ওই লোকটা তোদেরকে কী উত্তর দেবে বলে তোদের মনে হয়?”

চুপ। এর উত্তর এরা কেউ জানে না। জানার কথাও না। আমি নিজে মুখ খুললাম, কয়েক সেকেণ্ড দেখে।

বললাম, “যে দেশে নেতা, মন্ত্রী, পুলিশ, কর্তাব্যক্তিরা কোনো মেয়ের রেপ হলে আগে জিজ্ঞেস করেন, – মেয়েটার পরনে কী পোশাক ছিল। মেয়েটা রাত আটটার পরে বাড়ির বাইরে বেরিয়েছিল কেন। ট্যাক্সির ভেতর অন্য একটা লোক থাকা সত্ত্বেও মেয়েটা তার ভেতর ঢুকেছিল কেন। – যে দেশে মানুষ ধর্ষণের সমর্থনে শোভাযাত্রা করতে পারে। যে দেশে তুই এমন একটা পোশাক পরে পার্টিতে যেতে পারবি না যেটা পরে নিউ ইয়র্কে হয়তো স্কুলেও যেতে পারতিস। কারণ তোকে বলা হবে যে দুর্গতি হতে পারে। দুর্গতি হলে যেন তুই নিজেকে ছাড়া আর কাউকে দোষ না দিস, কারণ কাম অন, মেন উইল বী মেন।

মেন উইল বী মেন? তোদের সবার তো বাবা আছে। ভাই আছে দাদা আছে, ক্লাসে এতগুলো ক্লাসমেট আছে। সব তো মেন। সো হোয়াট ডু দোজ পীপল মীন বাই দ্যাট সেনটেন্স, ‘মেন উইল বী মেন’? দ্যাট মেন আর ইন জেনারেল অ্যান্ড বাই ডিফল্ট পোটেনশিয়াল রেপিস্টস? তোদের সবার বাবা পোটেনশিয়াল রেপিস্ট? ইজ দ্যাট দ্য ডেফিনিশন অফ বীয়িং আ ম্যান? – কাউকে যদি কখনো বলতে শুনিস এই কথাটা, সাথে সাথে ফিরিয়ে দিবি। এটা বীয়িং ম্যান নয়। এরা দুমড়ে দিয়েছে, দিচ্ছে ম্যান-এর সংজ্ঞা। নিজেদের দোমড়ানো মূল্যবোধকে জাস্টিফাই করতে।

্এই ধর্ষকাম মর্দাঙ্গির দেশে দাঁড়িয়ে তুই ওই লোকটাকে যদি জিজ্ঞেস করিস, “কেন”, সে কী বলবে তোদের? বুঝতে পারছিস না?

সে ঘুরিয়ে তোকে জিজ্ঞেস করবে – কেন নয়।”

“তোরা দেখেছিস তো, হেডলাইনে, জার্নালে, আর্টিকলে – বলা হয় – “হার ওনলি ফল্ট ওয়াজ দ্যাট শি ওয়াজ আ গার্ল।” মেয়ে হয়ে জন্মানোটাই যেন অপরাধ যে সমাজে, সেই সমাজে তুই ধর্ষণের প্রতিবাদ করলে তোকে তো তোকে পাল্টা প্রশ্ন করবেই?”

একজন মেয়ে হাত তুলল। “স্যার ইট ইজ ইভন মোর শকিং দ্যাট ইভন ফ্যামিলি মেম্বারস আর ডুয়িং দিস সামটাইমস।” আমি ওকে থামালাম। আরেকজন ছেলে বলল, “স্যার, ইট ইজ ইভন মোর ডিসগাস্টিং দ্যাট দে ডিড ইট টু অ্যান এইট ইয়ার ওল্ড গার্ল।” আমি ওকেও থামালাম। বললাম, – দাঁড়া এইখানে একটু।

তোরা যেদুটো কথা বললি, দুটোই আমি বুঝেছি। তোরা কী বলতে চাইছিস, আমি বুঝেছি। কিন্তু খেয়াল কর তোদের কথাদু’টোর মধ্যে একটা শক্ত গলদ আছে। তুই যে বলছিস, ফ্যামিলি মেম্বার হয়েও রেপ করল? – তার মানে বোঝায় যে ফ্যামিলি না হলে রেপটা একটু হলেও যুক্তিযুক্ত হত। … আর তুই যেটা বললি, যে এত ছোট বাচ্চাকে রেপ করল? – তার মানে দাঁড়ায় যে ওর বয়সটা আট না হয়ে আঠাশ হলে ব্যাপারটা তবু মেনে নেওয়া গেলেও যেতে পারত। — নিশ্চয়ই তোরা সেটা মীন করিসনি। কিন্তু বলার সময় গোলমাল হয়ে যাচ্ছিল। এই গোলমালটা তোরা করলি কারণ রেপ নিয়ে তোদের মৌখিক আলোচনা এই প্রথম। কিন্তু বাইরে অনেক বড়রাও করছে। ভুল করে করছে, ইচ্ছে করেও করছে। কিন্তু তোরা আর করিস না। কে করল, কাকে করল – সেসব বড় কথা নয়। কাজটা সেই একই, সেই একইরকম আনঅ্যাকসেপ্টেবল।

কথা হওয়া দরকার, আলোচনা হওয়া দরকার। এই তো দেখলি, তোরা অনেকে জানতিস না এই সমস্ত খবর। পাশের বাড়ি একটা পার্টি হচ্ছে, আর ওপাশের বাড়িতে একটা খুন। তোরা নিজেরাই বল, কোন্‌টার খবর পাওয়া বেশী জরুরী। – দেখিস, আইপিএলের চটক যেন সত্যিকারের দরকারী খবরকে তোদের দৃষ্টির আড়াল করে না দেয়। আমি বলছি না খেলা দেখিস না, সিনেমা যাস না, ফুর্তি করা বন্ধ করে দে। কিন্তু আজ যদি আমার জন্মদিনের পার্টি থাকে, আর আমার বাবার পা ভাঙে, আমি কেক কাটায় মশগুল হব না বাবাকে নিয়ে ডাক্তারখানায় দৌড়োব? – প্রায়োরিটি। – তোর নিজের সাথে ঘটছে না বলেই একটা ঘটনাকে প্রায়োরিটির তালিকায় নীচে ঠেলে দিস না। ফুর্তি করবি না কেন, কর। কিন্তু অন্ধের মতো নয়। তোর মতোই আর একজনের ফুর্তি কীভাবে সারাজীবনের মতো বন্ধ হয়ে গেল, সেদিকে একেবারে বিন্দুমাত্র পাত্তা না দিয়ে নয়।”
“এবার তোদের কাছে আমার ফাইনাল প্রশ্ন। – দ্যাখ ভাই, তোরা এখন নাইনে পড়িস। দ্যাখ যে লোকগুলো এই রেপগুলো করে, তারাও একদিন কিন্তু তোদের মতোই নাইনের ছাত্র ছিল। যে মহিলারা ওই মিছিলে হেঁটেছে, তারাও কিন্তু একদিন আট বছরের মেয়ে ছিল। ছিল না? ওই লোকগুলো একদিন তোদের মতো এইট-নাইন-টেনের ক্লাসরুমে বসে বসে ক্লাস করেনি?

করেছে তো। তাহলে আমায় তোরা বল, কী ভাবে সেই ক্লাস নাইন-টেনের বাচ্চাগুলো, সেই ছেলেগুলো মেয়েগুলো, – বড় হয়ে একদিন এইরকম রেপিস্ট হয়ে গেল?”

“তারা তো আকাশ থেকে পড়েনি? তারা তো কোনো পাতালের গুহা থেকে উঠে আসেনি! তাদেরকে তো কেউ কোনো গবেষণাগারে কৃত্রিমভাবে তৈরী করে লুকিয়ে আমাদের মধ্যে ছেড়ে দেয়নি। তারা তো আমাদেরই মতো এই একই ডালভাতজলহাওয়া খেয়েই বড় হয়ে উঠেছে। তারাও তো আমাদের মতোই রক্ত আর মাংস দিয়ে তৈরী! তারা তো ভিনগ্রহের কেউ নয়, তারা তো আমাদেরই মধ্যেকার আমাদেরই সমাজের মানুষ, কেউ তো তাদের মধ্যে রেপিস্ট হয়ে পৃথিবীর বুকে জন্ম নেয়নি! তাহলে কেন আমরা ওরকম হলাম না, অথচ ওরা ওরকম হল? কেন??”

“কীভাবে বিষিয়ে গেল তারা? কোথা দিয়ে? দ্যাট ইজ মাই ফাইনাল কোয়েশ্চেন ফর ইউ। …টেল মী।”

কেউ কেউ বলল, পরিবেশ। কেউ কেউ বলল, চিন্তাধারা।

আমি জিজ্ঞেস করলাম, “আচ্ছা বল পুণায় রেপিস্ট আছে?” – তারা অস্ফুট মাথা নেড়ে বলল, আছে। আমি বললাম, কই আমরাও তো পুণায় আছি। আমরা তো রেপিস্ট হলাম না। কয়েকজন কেন হল?

যদি একটা নির্দিষ্ট এলাকার নির্দিষ্ট পরিবেশই তার জন্যে দায়ী হয় তাহলে তো ম্যাপ করে চিহ্নিত করে দেওয়া যেত, এই এরিয়ায় যারা থাকে তারা রেপিস্ট। ওই এরিয়ার হাওয়াই ওমনি। আর অন্য এরিয়ায় যারা থাকে তারা রেপিস্ট নয়। হাওয়া পরিষ্কার।

তা তো হয় না। সবরকম মানুষ সবরকম জায়গায় মিলিয়েমিশিয়েই থাকে। তাহলে কোথা দিয়ে রেপিস্ট আসে? কোন্ চিন্তাধারা বেয়ে? কীভাবে চেনা যাবে সেই বিষের স্রোত?
আমি বললাম, দ্যাখ, এই লোকগুলোও একদিন ক্লাস এইটে ছিল। আমি চাই না যে আজকের এই ক্লাস এইটের কেউ, আজকের এই ব্যাচের কেউ, এই দু’হাজার পাঁচ সালে জন্মানো প্রজন্মের কেউ আজ থেকে দশ বছর পরে বড় হয়ে রেপিস্ট হোক। আমি শেষ করে দিতে চাই এই ট্র্যাডিশন। তাই তোরা বল, কী ভাবে, কোন্ পাকে পড়ে মানুষ মানুষ থেকে রেপিস্ট হয়।

জিজ্ঞেস করলাম, “তোরা কে কে মনে করিস – আশা করিস নয়, মনে করিস – যে আগামী দশ বছরের মধ্যে পৃথিবী রেপ-ফ্রি হয়ে যাবে, হাত তোল।”

কেউ তুলল না। অত কাঁচা কেউ নয়, এদের মধ্যেও। জানতাম কেউ তুলবে না। – অতএব জিজ্ঞেস করলাম, – তাহলে তোরা মেনে নিচ্ছিস যে সারা পৃথিবী জুড়ে তোদের যে প্রজন্ম, সেই প্রজন্মেও কয়েকটা ধর্ষক তৈরী হবে। কয়েকজন পাল্টে যাবে, মানুষ থেকে পিশাচে।”

মাথা নাড়ল।

আমি বললাম, “তাহলে সেটা কীভাবে আটকাবি সেটা ভাব। ভাব, কীভাবে নিশ্চিত করবি যে তুই নিজে পিশাচ না হোস; কীভাবে নিশ্চিত করবি যে তোর কোনো বন্ধু কোনো আত্মীয় পিশাচ না হয়; কীভাবে নিশ্চিত করবি তোর আশেপাশের কেউ পিশাচ না হয়।”

“কোন্ কলগুলো দিয়ে জীবাণু আসছে সেগুলো চিনে বার কর। দেন, সীল দেম।”
“এই নিয়ে তোদের সাথে কেউ কথা বলেনি বা বলেনা, আমি জানি। কিন্তু আমি বলছি। কারণ বালিতে মুখ লুকোলেই বিপদ উবে যায় না। আর যদি বয়সের কথাই বলা হয়, তাহলে আমি বলি যে আসিফার বয়স তোদের ছোটোবোনের মতো ছিল। সুরাটে তোদের চেয়ে ছোট একজনের দেহ পাওয়া গেছে জানিস? ছিয়াশিটা ক্ষত পাওয়া গেছে তার দেহে? – একটা কাজ কর, ডানহাতের একটা আঙুল দিয়ে নিজেকে ছিয়াশিবার স্পর্শ কর। আর প্রতিজ্ঞা কর, তোরা যখন আমার বয়সী হবি তখন তোদের আর এরকম কোনো কিছুর মুখোমুখি হতে হবে না। আর কাউকে তোরা মানুষ থেকে অমানুষ হয়ে যেতে দিবি না। তোদের মুখে আমি যে জিনিসটা এখন দেখতে পাচ্ছি, সেটা আমরণ তোদের মুখে আমি দেখতে পাব।

ডোন্ট লেট লাইফ ডিহিউম্যানাইজ ইউ। নেভার।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *