২০০৭এর পরে যারা পাশ করেছে, মানে আমার বয়েসীরা, তাদের জন্যে একটা মজার জিনিস শেয়ার করি।
জর্জ আর আর মার্টিনের লেখা ‘আ সং অফ আইস অ্যান্ড ফায়ার’ সিরিজ এখন বাজারে সবচেয়ে জনপ্রিয় বইগুলোর মধ্যে একটা। তার ওপর টিভি সিরিজ হয়েছে ‘গেম অফ থ্রোনস’, এই গ্রুপে অনেকেই দ্যাখে হয়তো।
এই বইয়ে ‘নাইটস ওয়াচ’ বলে একটা ব্যাপার আছে।
দ্য নর্থ, দ্য ভেল, দ্য স্টর্মল্যান্ডস, দ্য রীচ, দ্য ওয়েস্টারল্যান্ডস, দ্য আয়রন আইল্যান্ডস, আর ডর্ন – এই সাত রাজ্য মিলে তৈরী ওয়েস্টেরস মহাদেশ। আর ওয়েস্টেরসের উত্তরে মৃত্যুহীম বরফে ঢাকা চিরতুষারের রাজ্য। এই বরফের দেশে কারা থাকে, তা কেউ ভালো জানে না। কিন্তু বহু পুরোনো ইতিহাসে উত্তর থেকে নেমে আসা হিমপিশাচদের কথা পাওয়া যায়, যাদের সাথে বহু আগেকার সব মানুষরা লড়াই করেছিল। সেইসব মানুষরা ওয়েস্টেরসের উত্তর সীমান্তে এক বরফের প্রাচীর তুলে দেয়, যাতে আর কোনোদিন কেউ সেই প্রাচীর পেরিয়ে এদিকে আসতে না পারে। সেই থেকে এই প্রাচীর হাজার হাজার বছর ধরে অতন্দ্র প্রহরায় দাঁড়িয়ে আছে।
এই যে বিরাট বরফের প্রাচীর, তার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নাইটস ওয়াচের পত্তন হয়। সাত রাজ্য থেকে দলে দলে বীরেরা এসে তাতে যোগ দেন। তাঁরা শপথ নেন যে ঘরে ফিরবেন না। তাঁদের স্বার্থ বলে কিছু থাকবে না। উত্তরাধিকার বলে কিছু থাকবে না। পরিবার বলে কিছু থাকবে না। তাঁদের জীবন সারা ওয়েস্টরসের স্বার্থে বলিপ্রদত্ত হবে। সাত রাজ্যের মধ্যে যত আভ্যন্তরীণ গোলমাল, যুদ্ধ, রাজনৈতিক বচসা – সেসবে নাইটস ওয়াচ কোনো অংশ নেবে না। তার কাজ শুধু একটাই – হোল্ড দ্য ওয়াল।
আসলে আমি বলতে চাইছি, – সাধু হওয়া কী জিনিস সেটা নাইটস ওয়াচের কথা পড়লে মনে পড়ে যায়।
জর্জ আর আর মার্টিন লিখেছেন – নাইটস ওয়াচে যারা যোগ দেয়, ঢোকার পরে পরে তাদের কিছুদিন ট্রেনিং নিতে হয়। তারপর আনুষ্ঠানিকভাবে একদিন তারা শপথ নেয়। শপথটা এই –
“Night gathers, and now my watch begins. It shall not end until my death. I shall take no wife, hold no lands, father no children. I shall wear no crowns and win no glory. I shall live and die at my post. I am the sword in the darkness. I am the watcher on the walls. I am the fire that burns against the cold, the light that brings the dawn, the horn that wakes the sleepers, the shield that guards the realms of men. I pledge my life and “honor to the Night’s Watch, for this night and all the nights to come.”
যাঁরা সাধু হন, তাঁরা এইজন্যেই সাধু হন। অবশ্যই এখানে মন না রাঙায়ে বসন রাঙান যাঁরা তাঁদের কথা হচ্ছে না। বই লিখলেই লেখক হয় না, গেরুয়া নিলেই সাধু হয় এমন ভাবারও কোনো কারণ নেই, কিন্তু ধরার সময় তো আমরা আদর্শটাকেই ধরে কথা বলি? – নাইটস ওয়াচে যাঁরা আছেন তাঁরা সৈনিক, তীর-তরোয়াল নিয়ে তাঁদের লড়াই করতে হয়। সন্ন্যাসী সঙ্ঘে যাঁরা থাকেন তাঁদের লড়াইটা অন্য প্লেনে। মোদ্দা ব্যাপার একই।
এবার যারা বলবে যে হ্যাঁ সন্ন্যাসী সঙ্ঘ কোরাপ্ট হয়ে গ্যাছে, অনেক নোংরামি আছে – তাদের বলি, যে বইয়ের নাম করলাম সেটা পড়ে ফেলা হোক। নাইটস ওয়াচ আর রামকৃষ্ণ মিশন – পাশাপাশি মিলিয়ে দেখা হোক। কোরাপশনের গল্প দুটোতেই আছে, এত মিল আছে যে অবাক হতে হয়। কিন্তু তার মধ্যেও হিরোইজম কীভাবে বেঁচে থাকে সেটা দেখতে হলে বইটা পড়ে নিন, তারপর বাস্তবে ফিরে এসে আবার চোখ কচলে তাকান। বোঝার থাকলে বুঝে যাবেন।