#ধর্মাধর্ম (১)

#ধর্মাধর্ম (১)

………………

আমি যে স্কুলের ছাত্র, মানে বিদ্যাপীঠ, সেটা একটা হিন্দু ধর্মপ্রতিষ্ঠানের অংশ। সুতরাং তার নিয়মকানুনে, দৈনন্দিন রুটিনে, উৎসবেঅনুষ্ঠানে হিন্দুধর্ম বরাবরই মেখে ছিল।

হিন্দুধর্মের মজাটাই হল তার মাল্টিপ্লিসিটি। যার জন্য ‘ধর্ম’ কথাটা আধুনিক সময়ে যা বোঝায়, সেই অর্থে ব্যবহার করতেও বেখাপ্পা লাগে এর ব্যাপারে কথা বলতে গেলে। সাধারণ ধর্ম একটা রূটের কথা বলে, বা তার কিছু ভ্যারিয়েশন। হিন্দুধর্মের আন্ডারে কত রূট তার ইয়ত্তা নেই।

তার ওপরে এইসব লতাপাতার সাথে মিশে আছে ভাষা, সংস্কৃতি। সংস্কৃত ভাষা আর হিন্দুধর্ম ইকুইভ্যালেন্ট নয়, কিন্তু এখনকার দিনে কার্যত সবাই সেটাই ধরে নেয়। বিদ্যাপীঠে এদিকে সেদিকে সংস্কৃত লাইনের ছড়াছড়ি ছিল। তার অর্থ যা, তা যে সবসময় পূজা-অর্চনা বা ধর্মাচরণের সাথে যুক্ত তা নয়; বেশীরভাগগুলোই তা নয়। কিন্তু সবটা মিলে একটা কমপাউন্ডেড ব্যাপার ছিল।

ঢোকার সময় মেইন গেটের ওপর খোদিত ছিল, “উত্তিষ্ঠত জাগ্রত প্রাপ্য বরান্ নিবোধত।” — কঠোপনিষদের শ্লোক। নচিকেতার সাথে যমরাজের সাক্ষাৎকারের গল্প। শ্লোকের অর্থ কোনোরকম পুজোর সাথে সম্পর্কিত নয়। একটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ঢোকার মুখে মেইন গেটের ওপর যে কথা লিখলে সবচেয়ে বেশী মানায়, এর অর্থ তাইই। — কিন্তু আমাদের সেই বয়সে ক্ষমতা ছিল না, ধর্মগন্ধ বাদ দিয়ে একে অনুধাবন করার। — ভুল বললাম। আমাদের ক্ষমতা ছিল, আমাদেরই বরং কোনোরকম প্রিজুডিস ছিল না। আমাদের বাংলা করে মানে বলে দেওয়া হয়েছিল, – ওঠো, জাগো, না থেমে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাও। – আমরা সোজাসুজি তা-ই বুঝেছিলাম। তার সাথে কোনো ধর্মীয় আরক মেশাইনি। যে প্রাপ্তবয়স্করা আমাদের এইসব শিখিয়েছিলেন, তাঁদের কারো কারো মনে ফুল-ব্লোন হিন্দুরঙা ভাবনা ছিল, তাঁদের কাছে ওই এগিয়ে যাওয়ার পথও হিন্দুধর্মের পথই ছিল। কিন্তু বিবেকানন্দ নিজের বইয়ে যেরকম বলে গেছেন, তার সরাসরি বিরুদ্ধাচরণ করার মত অভদ্রতা বা সাহস তাঁরা কখনো দেখাতেন না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *