“…Tell the truth, don’t be bullshitting people, there’s enough bullshit as it is…”
মাঝে মাঝে ক্লাসে ক্যামিও অ্যাপিয়ারেন্সের দরকার হয়। ‘এক্স-মেন: ফার্স্ট ক্লাস’-এ যেমন ছোট্টো করে একজনের একটা ক্যামিও ছিল, সেরকম। আজকে প্ল্যান ছিল নাইনের পাবলিককে কিছু স্পেশাল জিনিস দেখাবো। এদের হচ্ছে যাকে বলে ‘স্মার্ট ক্লাসরুম’, মানে সিলিং থেকে প্রজেক্টর ঝোলে, বোর্ডের ওপর সাদা পুল-ডাউন পর্দা গোটানো থাকে। আমি এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে ওদের উষ্টুম-ধুষ্টুম ইয়ে দেখাই। যতীন দাসের দেশের লোক না আমি? ব্যাটারা কোর্ট বানাবে, কাঠগড়া বানাবে, সেই কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আমি খবরের কাগজে বোমা বানানোর ফর্মূলা লীক করব।
এখন সেশনের শেষ, তাই মোটামুটি সব ক্লাসেই রিভিশন চলছে। আমি আর এদের কী রিভিশন করাবো? নিচু ক্লাসের সবাই বানানসম্রাট (কার্তিকদা উবাচ), কিন্তু আধুনিক শিক্ষাপদ্ধতিতে এদের খাতায় ঢ্যারা দেওয়া যায় না, লাল কালিতে কারেকশন পর্যন্ত করা যায় না। ওতে নাকি সুকুমার ছানাপোনাদের সুকোমল মনে আঘাত লাগে। নিয়ম – সবুজ কালিতে কারেকশন হবে (বোধহয় তাতে ছাত্রদের সালোকসংশ্লেষে সুবিধে হয় বা ওই জাতীয় কিছু) আর ভুল কিছু থাকলে তার তলায় সবুজ কালিতে ডাব্ল আন্ডারলাইন করতে হবে। — তা, এইসব ফ্যানানো টেকনিকে কাজ কিসুই হয় না। ছাত্ররা কারেকশনের পরোয়াও করে না, অবলীলায় ‘মীরা বাঈ’ লিখতে গিয়ে ‘মেরা ভাই’ লিখে যায়। রিভিশন-ফিভিশন সব নাটক আর গল্প। তাই আমি এই ক্লাসগুলো ওদের অন্য জ্ঞান বিতরণ করে কাটাচ্ছি।
আমি বিদ্যাপীঠের ছাত্র। কাল আমার বন্ধু বিশ্বরূপ যশের সাথে ফোনে কথা হচ্ছিল, – তাতে উঠে আসছিল আমাদের বিদ্যাপীঠ থেকে পাওয়া ‘নিজে পড়া’-র অভ্যাসের কথা। নিজে পড়া, নিজে বই নিয়ে নিজের চোখ দিয়ে মন দিয়ে সেটাকে চিনতে চেষ্টা করা বুঝতে চেষ্টা করা, নিজের বন্ধুদের সাথে নিজের মতো করে সেই নিয়ে আলোচনা-আড্ডা, – এই জিনিসটা আমাদের একটা খুব বড়ো ট্রেনিং ছিল। ক্লাস সিক্সের ছাত্রদের বলছিলাম এর কথা। এরা বড় অনাথ, আমাদের যেরকম অনেকগুলো করে বাপ-মা ছিল, এদের সেরকম নেই। তাও, বললাম গ্রুপ-স্টাডি করার কথা, ভালো ছাত্ররা খারাপ ছাত্রদের দায়িত্ব নেবার কথা, নম্বর নিয়ে লজ্জা না পাবার কথা, যে যেখানে আছে সে সেখান থেকেই আরো এগিয়ে যাবার কথা। পুরো ছাত্রজীবনটাকে একটা বিরামহীন শেখা হিসেবে দেখার কথা, – র্যাঙ্কার হওয়ার চেষ্টা না করে শুধু একটা ভালো ছাত্র হতে চেষ্টা করার কথা। — এইসব জ্ঞান বিতরণ করতে করতে লাস্ট পিরিয়ড চলে এলো, – ক্লাস নাইন। মানে সেই নন অ্যালাইনড মুভমেন্ট।
চ্যাপ্টারে অতি অল্পই ছিল। খানকতক সাল, নাম। চুক্তি। সব একটা চার্টে এঁকে ওদের ক্লাসে টাঙিয়ে দিয়েছিলাম আগেই। পিরিয়ডের সময়টুকু আলুচানা না করলে সুখ নাই।
প্রথমে যে ভিডিওটা দিয়ে শুরু করলাম সেটার গোড়াটা লেখার আরম্ভেই দিয়ে রেখেছি… ক্লিপের নাম “Question Everything”, মঞ্চে এক এবং অদ্বিতীয় জর্জ কারলিন। এটা প্রথম ক্যামিও। কারলিনের কথা শেষ হতে না হতেই দ্বিতীয় জনের ভয়েস-ওভার শুরু হল। জাক ফ্রেসকো। ১৯১৬ সালে জন্ম, এই ক’দিন পরেই ১৩ই মার্চ আরো একটা বছর পার করবেন। আমি পিরিয়ডের আরম্ভে সবাইকে জিগ্যেস করেছিলাম – “স্টিভ রজার্সের বাড়ি কোথায় কে কে জানে? ‘সিভিল ওয়ার’-এ ছিল।” উত্তরটা হত ব্রুকলিন। এই জাক ফ্রেসকোর বাড়িও ব্রুকলিনে। ইনিও এখনো বেঁচে।
এর পরে যেটা করলাম সেটায় আমার লাফাতে ইচ্ছে করছিল। আমি কোনোদিনও ভাবিনি একটা ভরা ক্লাসরুমে বড় স্ক্রীন আর স্পিকারে একটা আনকোরা নতুন অডিয়েন্সের সামনে ‘বর্ন টু রান’ চালাব।
এবারে ফাইনাল। ইনট্রোটা দিয়ে নিলাম। আজকে ৭ই মার্চ। ১৯৮৫ সালের ৭ই মার্চ রিলিজ হওয়া একটা গান আজকেও তুলনাহীন অমর। ‘৮৩-‘৮৫ সালে আফ্রিকায় দুর্ভিক্ষ হয়েছিল, তাই ওদের সাহায্য করতে হ্যারি বেলাফন্টের উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্রের গায়ক-শিল্পীরা একসাথে মিলে এই গানটা গেয়েছিলেন। বললাম – যেটা দেখতে চলেছিস সেটার কোনো রিহার্সাল হয়নি, কোনো সাজানো পরিপাটি প্ল্যানিং হয়নি। প্রথম টেক-এই নেওয়া একটা অদ্ভুত, অদ্ভুত ভিডিও। – বলে ক্লাসভরা চোখের সামনে চালিয়ে দিলাম শিল্পীদের নাম আর সাবটাইটেল সহ ‘উই আর দ্য ওয়ার্ল্ড’।
স্কুল ছুটির সময় আমাকে ওরা দুটো কথা বলে গেল।
১) “স্যার এই গানটা শুনে প্রতিদিন দিন শুরু করতে ইচ্ছে করছে”
২) “স্যার ওই প্রথম ক্লিপটায় ওই প্রথম ভদ্রলোকের নামটা যেন কী?”
——