“তোরা স্ল্যাশকে চিনিস তো?”
.
.
.
… আজকে নাইনের সুকুমারমতি শিক্ষার্থীদের নন-অ্যালাইনড মুভমেন্ট পড়ানোর কথা ছিল। প্রথম-দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পার করে এখন টেক্সটবুক শেষের দিকে, বার্লিন ওয়াল ধ্বসে গেছে, রাষ্ট্রসঙ্ঘের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা আরম্ভ হবে-হবে করছে, সামনের মাসে ফাইনাল। বোর্ডে ‘Yugoslavia’ লিখে ওদের বলছিলাম যে বানানটা এককালে ‘Jugoslavia’ লেখা হত – উচ্চারণটা আসলে ‘য়’ আর ‘য’-এর মাঝামাঝি – সেই কথা বলতে বলতে নরেন্দ্রপুরে শেখা একটা ইয়ে মনে পড়ল আর জিগ্যেস করে ফেললাম – ‘তোরা স্ল্যাশকে চিনিস তো?’
সবাই নীরব, মুখ-চাওয়াচাওয়ি। আমি ততোধিক হতবাক। — “তোরা কে-উ গীটারিস্ট স্ল্যাশকে চিনিস না???”
তারা জানাল, – তারা কেউ চেনে না।
আমি জিগ্যেস করলাম – কেউ ‘গানস অ্যান্ড রোজেস’ বলে কোনোকিছুর নাম শুনেছে কি না। এইবার কয়েকজন সাড়াশব্দ করল। আমি হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। বললাম, “স্ল্যাশ ওই ব্যান্ডে গীটার বাজাত। নভেম্বর রেন বলে একটা গান আছে, আজ বাড়ি গিয়ে শুনে নিস।”
“কলেজে আমার এক ক্লাসমেট ছিল, রক গানের পোকা। সে আমাকে একবার ধরে শিখিয়েছিল – নামটা ঠিক ‘স্ল্যাশ’ না, আবার ঠিক ‘সিল্যাশ’-ও না – দুটোর মাঝামাঝি একটা উচ্চারণ। – তেমনি এইটা ঠিক ‘যুগোস্লাভিয়া’ না, আবার ঠিক ‘য়ুগোস্লাভিয়া’-ও না – দুটোর মাঝামাঝি। বুঝিফায়েড?”
তারা জানাল, – বুঝিফায়েড।
…… বিস্তর জ্ঞান বিতরণ করলাম তারপর, ইতিহাস ক্রমশ বর্তমানের ছায়া মাড়িয়ে ফেলছে, hindsight জিনিসটা তত ভালো কাজ করছে না এখনোও, তাই এখনো এই চ্যাপ্টারের গায়ে বিতর্ক জড়িয়ে আছে এখানে ওখানে, সবকিছুর সোজা উত্তর পাবে না — এইসব বলে আবার বিধিসম্মত সতর্কীকরণ দিয়ে রাখলাম – “পরীক্ষায় অন্ধভাবে বই ফলো করবি নাহলে নাম্বার উঠবে না।” যাইহোক, নন-অ্যালাইনমেন্ট পড়া চলছে, সুতরাং বোর্ডের একদিকে লেখা ‘ন্যাটো’ – অন্যদিকে লেখা ‘ওয়ারসঅ প্যাক্ট’। এই কোল্ড ওয়ারের কিছু দেখলেই আমার দুটো জিনিস মনে পড়ে। প্রথমটা হল স্পাই ফিকশন। নরেন্দ্রপুরে ডি.এস.সি-র ক্লাসে শোনা নাম – John le Carré। তারপর নরেন্দ্রপুরেরই লাইব্রেরী থেকে The Spy Who Came In From The Cold তুলে পড়েছিলাম। — এইবার তাই কর্তব্যবোধে বোর্ডের একটু ওপরদিক করে লেখক আর বইয়ের নামদুটো লিখে ফেললাম।
তারপর সুকুমারমতি বালকবালিকাদের দিকে তাকিয়ে জিগ্যেস করলাম, “তোরা কেউ ‘এক্স মেন: ফার্স্ট ক্লাস’ বলে একটা সিনেমা দেখেছিস?”
😛
#ইতিহাসফাঁস