ফেলনা

কবিতা আমাদের হাত ধরে নিয়ে যায় পাহাড়ী পথ বেয়ে, এনে বাঁক ঘুরিয়ে দাঁড় করায় স্বর্গের মতো কোনো এক উপত্যকা-ছবির সামনে, আমরা আশ্চর্যে আর ভালোলাগায় স্তব্ধ হয়ে যাই। সেই ভালোলাগা তখন মনে হয় দেখাই ভালোবাসি যাদের তাদেরকেও, তাদেরকেও নিয়ে আসি এই মায়াবী পাহাড়ের গায়ে, পাশাপাশি হয়ে দেখি এই অপূর্ব দিগন্ত, একসাথে ওর সঙ্গে মিলেমিশে যাই।

কিন্তু তা তো হয় না সবসময়। আমি বাংলা কবিতা পড়ি, বাংলা গান শুনি। কিন্তু যাদের শোনাতে চাই তারা তো বাংলা বোঝে না। কারণ তারা আমার এখানকার ছেলেমেয়ে, ইস্কুলের সম্পর্কে সম্পর্ক। বাংলা তো তারা জানে না। তখন তাই আমি মরীয়া হয়ে কখনো কখনো অনুবাদ করে ফেলি। ভালো হয় না সেই অনুবাদ। কী করেই বা ভালো হবে, আমার না আছে সেরকম চর্চা না আছে প্রয়োজনীয় ক্ষমতা। অনুবাদ করে নিজেরই ভালো লাগে না। অক্ষম বাহন মনে হয়।

কিন্তু সেই অক্ষম অনুবাদেও আশ্চর্য ম্যাজিকে ফুল ফোটে, – ওরা পড়ে বলে “কী অদ্ভুত সুন্দর!” আমি সেই বলা শুনে ভাবি, এমনিও হয়? মনে হয়, যে অনুবাদকে আমি ‘জঘন্য’ বলেছি, সেই অনুবাদে এরা তো তবু সৌন্দর্য খুঁজে পাচ্ছে! আমি যে পাপড়ি ছুঁয়েছিলাম, সেই পাপড়ির গায়ে এরাও হাত রেখেছে। তাহলে আমি কী করে আর ওকে বাতিল করি? আমার কাছে ও কিছু বয়ে আনেনি ঠিক, কিন্তু অন্য কারো কাছে তো কিছু বয়ে নিয়ে গেছে? অন্য কারো হাত ধরে তো ও নিয়ে গেছে, ওর মতো করে, ওর নিজস্ব কোনো অন্য গিরিপথ দিয়ে?

তবে না, শিল্পে ভালোমন্দ নেই তা হয় না। যা ভালো না, তা ভালো না। কিন্তু ভালো শিল্প না হলেও, হয়তো তা ভালো অন্য কিছু। হয়তো ভালো বন্ধু।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *