ভ্যাম্পায়ার কীভাবে হয় জানেন?
একজন মাস্টার ভ্যাম্পায়ার থাকে। যে বিকট টেকনিক লাগিয়ে নিজের মানবসত্তা বিসর্জন দেয়। তারপর থেকে সে যাকে কামড়ায়, সেই ভ্যাম্পায়ার হয়ে যায়। ভ্যাম্পায়ার হলে নানারকম অতিমানবিক শক্তি পাওয়া যায়। আসুরিক গায়ের জোর হয়, কোনো রকম চোটজখম হয় না, আকাশে ওড়া যায়, স্বাভাবিকের চেয়ে অনেকগুণ বেশী হিংস্রভাবে প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করা যায় লড়াইয়ের সময়। দরকারে ইচ্ছেমতো নানারকম রূপ নেওয়া যায়। এমনকী কিছু কিছু পশুপাখিদের নিজের বশ করে তাদের দিয়েও কাজ করানো যায়।
সাধারণভাবে ভ্যাম্পায়ারদের দেখে আলাদা করে চেনা যায় না। বিশেষ প্রশিক্ষণ নেওয়া থাকলে চিনবেন – যেধরনের প্রশিক্ষণ DADA জাতীয় কিছু কোর্সে দেওয়া হয় – না হলে আপনার চোখে তারা সাধারণ আর পাঁচটা মানুষের মতোই ঠেকবে। একমাত্র স্বেচ্ছায় নিজমূর্তি না ধরলে তাদের ওই গন্ধর্বনিন্দিত চেহারা দেখার দুর্ভাগ্য আপনার হবে না। আক্রান্ত হলে বা মারা যাওয়ার মুহূর্তে অবশ্য আসল চেহারায় ফেরে। আর শিকারের গলায় দাঁত ফোটাবার সময় কষদাঁত দেখে চেনা যায়। এই ছদ্মবেশ ধরার কায়দাতেই আসলে ভ্যাম্পায়াররা বেশীরভাগ সময়ে শিকার ধরে। খুব আকর্ষক রূপবান পুরুষ, বা সবিশেষ সুন্দরী নারী – এইসব ছদ্মবেশই বেশী নেয়। বোকা মানুষ তাই দেখে ভুলে কাছে যেতে চায়, তারপর অ্যাক্ট টু শুরু হয়। দুমিনিটে রান্না খাওয়া মায় হাত ধুয়ে নেক্সট কোর্সের জন্যে তৈরী হয়ে যায়। যে হতভাগা এইমাত্র শিকার হল, এবারে সে নিজেই শিকারীদের একজন। এ এক উল্টো ফুড চেইন, যাতে আপনি প্রথমে খাদ্য, তারপর খাদক।
ভ্যাম্পায়ারদেরকে বলা হয় ‘আনডেড’ – কারণ তারা না জীবিত, না মৃত। ছুরি চালিয়ে, তীর ছুঁড়ে, গুলি করে ভ্যাম্পায়ার মারা যায় না। তাদের গায়ে এসবের আঁচড়ও লাগে না। ভ্যাম্পায়ারের দুর্বলতা হল সূর্যের আলো – সেই আলো গায়ে লাগলে তারা পুড়ে শেষ হয়ে যায়। দিনের বেলায় তাই ভ্যাম্পায়ার বেরোয় না। তারা বেরোয় সূর্য ডোবার পর – সন্ধ্যাবেলায়, সারা রাত তারা চরে বেড়ায়, আর ভোরের আলো ফোটার আগেই তারা নিজেদের অন্ধকার কফিনে ঢুকে পড়ে। যারা ভ্যাম্পায়ার শিকার করে তাদেরকে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে সেইসব অন্ধকার ডেরায় ঢুকে কফিনের ঢাকনা সরিয়ে কাজ সারতে হয়। এই কাজ সোজা নয়, অনেক ভ্যাম্পায়ার শিকারী দুর্ঘটনার কবলে পড়ে নিজেরা ভ্যাম্পায়ার হয়ে গেছে।
গোড়া থেকে কেউ কিন্তু ভ্যাম্পায়ার থাকে না। কামড় থেকে বাঁচতে পারলে আপনি নিরাপদ। কামড় থেকে বাঁচা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তারপর লড়ুন। কারণ একবার আপনি যদি ভ্যাম্পায়ার হয়ে পড়েন, আপনাকে আর ফিরিয়ে আনার কোনো পথ নেই। ইররিভার্সিবল চেঞ্জ।
ভ্যাম্পায়ারিজমের থেকে মৌলবাদ কম বিপজ্জনক এই একটি মাত্র কারণে। মৌলবাদীকরণ রিভার্সিবল। অনেক সময়সাপেক্ষ, কঠিন এবং বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই যন্ত্রণাদায়কও। কিন্তু তাও, এর চিকিৎসা আছে। শুধু তাই না, এর টিকাও আছে। সেই টিকা ঠিকমত নেওয়া থাকলে আপনাকে জোর করে মৌলবাদী করা প্রায় অসম্ভবের পর্যায়ে পড়ে। আপনি নিজে আক্রান্ত হওয়ার চিন্তা না করে নিশ্চিন্তে লড়াই করুন, কোনো ব্যাপার না।
এবার কথা হল এই টিকা এবং চিকিৎসা পাওয়া যায় কোথায়, দেওয়া হয়ই বা কীভাবে? এবং মৌলবাদের বিরুদ্ধে লড়ার টেকনিকই বা কোথায় শেখা যায়?
সুখের কথা, এই চিকিৎসা এবং ফাইটিং টেকনিক শেখার জন্যে আপনাকে শাওলিন বা লীগ অফ শ্যাডোজ জাতীয় কোনো দুর্গম গোপন শিক্ষামন্দিরে যেতে হবে না, লিয়ান ইউ টাইপের হেলিশ আইল্যান্ডেও বছর কয়েক কাটাতে হবে না। আমাদের আশেপাশেই, কম খরচায় সহজেই এই সবের জোগান পাওয়া যায়। কিন্তু আপনাকে খাটতে হবে। মালমশলা সব পেয়ে যাবেন, তারপর চেষ্টা দিলেই ফল পাবেন। এবং আরো লাভের কথা, এই জিনিস এমনই যে আপনি ফ্রি-তে অন্যেকে বিলোতেও পারবেন নিশ্চিন্তে, – তাতে আপনার স্টক একটুও কমবে না। বরং বাড়ে! এমন দুর্দান্ত বস্তুটি কী?
মৌলবাদের বিরুদ্ধে লড়ার অস্ত্র-কাম-ওষুধ এই এপিক জিনিসটার নাম হল শিক্ষা। শিক্ষা কীভাবে পাবেন? বিভিন্ন ভাবে পেতে পারেন। সবচেয়ে পুরোনো এবং সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হচ্ছে বই। বই কিনে পড়তে হয়, তাহলেই হয়। আপনি যত পড়বেন তত আপনার ইমিউনিটি বাড়বে। আর শিক্ষার একটা দারুণ গুণ হল, ওষুধ এবং পথ্য – দুটোর কাজই এতে হয়। কাজেই আপনি যত পড়বেন, তত আপনার স্বাস্থ্য ভালো হবে, খিদেও বাড়বে, এবং সেই খিদে মেটাতে আপনি এই বইই আরও আরও পড়তে পারবেন, – কোনো রকম সাইড এফেক্ট ছাড়া। বই আপনি নানা রকম পাবেন, নানা স্বাদের পাবেন, – একঘেয়ে লাগার কোনো চান্সই নেই। এই বই পড়ার সময়ে একটা সাময়িক সমস্যা হতে পারে, কিছু বিশেষ ধরনের কুপাঠ্য বই পড়ে আপনার মনে বিষক্রিয়া হতে পারে, এগুলো ভেজালের জন্যে হয়। তবে আপনি যদি নানারকম বই পড়া চালিয়ে যান এবং সেইসব বই থেকে যা পাচ্ছেন তা কাজে লাগাতে থাকেন, তাহলে এইসব সাময়িক সমস্যা আপনিই কেটে যাবে।
বই ছাড়াও নানা ধরনের অডিও ভিজুয়াল উপায় এখন খুবই কার্যকরীভাবে চলছে, ভালো সিনেমা, ভালো গান, ভালো বক্তৃতা বা আলোচনা, এমনকী ভালো আড্ডা – এই সবই খুব ভালো কাজে দেয়। বিশেষ করে সঠিক ধরনের আড্ডার মতো সহজপাচ্য পথ্য আর নেই। তবে এই সব ক্ষেত্রে ভেজাল বেশী পাওয়া যায়, তাই ওই বিষক্রিয়ার বিপদ অনেকটা বেশী। কিন্তু, সেটাও সাময়িক হতে বাধ্য। সবচেয়ে বড় কথা আস্তে আস্তে আপনার মধ্যে এইসব ভেজাল খাবারের জন্যেও ইমিউনিটি তৈরী হয়ে যাবে।
কাজেই আজই শুরু করুন। বই পড়ুন, বই পড়ান। স্বর্ণপর্ণীর একটা ডাল থেকে কাটিং করে করে প্রোফেসর শঙ্কু অনেকগুলো গাছ করে ফেলেছিলেন: আপনিও একবার পড়তে শুরু করলে চক্রবৃদ্ধিহারে রসদ পেতে থাকবেন। পড়ুন, পড়ান, নিজে ওয়ার-সাপ্লাই মজুত করুন, সবাইকে বিলান। সন্ধ্যের কিন্তু বেশী দেরী নেই।