বেনিয়াসহকথা – ২

আগের আপডেট পড়ে দেখছি লোকজনের বেশ ফুর্তি হয়েছে। কিন্তু প্রায় কেউই আসলে আমার ইয়েটা বুঝতে পারেনি। বন্ধুরা ভাবছে আমি দারুণ ভালো গঠনমূলক কাজকর্মের বিবরণ পেশ করছি, মনের আনন্দ প্রাণের আরাম এইসমস্ত ফ্যাক্টর ভাগ করে নিচ্ছি। দিনে দিনে আরো লিখব, আরো সুন্দর সুন্দর জিনিস আসবে। কিন্তু তা না, আসল কথা হল মাঝেমাঝে যখন মটকা গরম হয়ে যায় তখন আর কিছু করার থাকে না। ফেসবুক ভালো জায়গা, নিজের ওয়ালে যা খুশি লেখা যায়, গালিগালাজ করা যায়, বাংলায় ঝাল ঝাড়া যায় মনের আনন্দে, – তার ওপর আবার আমার পোস্ট শুধু তারাই দেখতে পায় যারা আমাকে এমনিতেই সহ্য করে চলে, কাজেই দুম করে কেউ ‘অফেন্ডেড’ হবে সেই চান্সও কম। তাই এই রাস্তা ধরেছি। ‘লেখা’র জন্য একেবারেই না কিন্তু। পাতি আপডেট।


পরশুদিন এক বন্ধুর পোস্ট পড়ে জানলাম, রাইটার্স ব্লক পাঁচরকম হয়।

১) মাথা ফাঁকা, আইডিয়া আসছে না, কী লিখব ভেবে পাওয়া যাচ্ছে না।
২) মাথায় রসদ মজুত, আইডিয়া আছে, কিন্তু লিখতে ইচ্ছে করছে না।
৩) মাথায় কিছু আসেনি, লেখারও কোনো ইচ্ছে নেই।
৪) পুরো হেব্বি মুডে এসে গেছি, একদম লিখে ফেলব, – কিন্তু আগে একটু এই ইয়েটা একটু ইয়ে করে নি – তারপর -আজ না হোক কাল তো লিখে ফেলছিই…
৫) অ্যাঅ্যাঅ্যাঅ্যাঅ্যাঅ্যাঅ্যাঅ্যাঅ্যাঅ্যাঅ্যাঅ্যাঅ্যাঅ্যাঅ্যাঅ্যাঅ্যাঅ্যাঅ্যাঅ্যাঅ্যাঅ্যাঅ্যাঅ্যা

আমার ঘটনা জেনারেলি দু’নম্বর। টপিক আছে, কিন্তু ওই আর কী – একটা পারপিচুয়াল ‘ধের’। এইভাবে কি আর ল্যাখক হওয়া যায়। আমার এক ক্লাস সেভেনের ছাত্রী, তার বক্তব্য – হিস্ট্রি পড়ে কী হবে; হোয়াই ডাজ ইট ম্যাটার, ইট টকস অ্যাবাউট ডেড পীপল। আমি শুনে তাকে শিক্ষামূলক প্যাঁচে ফেলবার মতলবে বললাম – একদিন তুইও তো ডেডই হয়ে যাবি, দেন হোয়াই ডু ইউ ম্যাটার? সে খুব সরলভাবে ঠোঁট উল্টে বলল – স্যার আই ডোন্ট ম্যাটার। আমি তাই শুনে মনে মনে ‘জীতে রহো বেটি’ বলে মনে মনেই জিভ কেটে সরে গেলাম। এইরকম হার্ডকোর নিহিলিস্ট হতে হয়। আমি অতটা নই তবে কাছাকাছি। সুতরাং ওই দুই নম্বর।

এই বেনিয়া সহকলা – এই যা! বলতে না বারণ করেছিল! – মানে বলছিলাম এই ইস্কুলের গল্প নিয়ে যে লেখার কথা, তার বেলায়ও একই ব্যাপার। ঘটনার কি আর অভাব আছে? কিন্তু দুটি জিনিস মানুষের থাকে, ‘জোশ’ আর ‘ল্যাদ’। আগেরটা ইস্কুলেই পুরো খরচা হয়ে যায়, তাই পরেরটা ছাড়া পরে আর কিছু থাকে না। তাও দেখি, বসেছি যখন একটা ইয়ে বলে যাই।

ক্লাসে এইটে পড়ানো – আমেরিকার মুক্তিযুদ্ধ আর ফরাসী বিপ্লব। এদের ক্লাসে ক্লাসে প্রোজেক্টর ঝোলানো আছে, তাই দিয়ে ‘পিপিটি’, ‘ভিডিও’ – এইসব দিয়ে ‘পড়ানো’কে ‘সরস’ করে তোলা হয়। আসলে যেটা হয় সেটা হল ছেলেমেয়েগুলোর ইয়ে মারা যায় *। কারণ স্লাইডগুলো বাজেভাবে বানানো, ভুলে ভর্তি। যে পড়াবে সে সাবধান না হলে ছাত্রদের সর্বনাশ। আর ভিডিওগুলো যেগুলো একটু কষ্ট করে ইউটিউব থেকে খুঁজে নামানো সেগুলো ভালো, বাকিগুলো বেকার।

এর মধ্যে একটা ভিডিও চালাতেই প্রথমে এক ঝলকের জন্য একটা লোগো দেখা গেল – Ubisoft।
ভিডিওটা ছিল আমেরিকার মুক্তিযুদ্ধের ওপর। ব্যাটাচ্ছেলে স্কুল কোথা থেকে এই ভিডিও ঝেড়েছে সেটা এবার পরিষ্কার বোঝা গেল। আমিও জানি, স্টুডেন্টরাও বিলক্ষণ জানে – এই যে নাটকীয় ন্যারেশন আর থ্রি-ডি অ্যানিমেশন ওয়ালা দারুণ কোয়ালিটির জিনিসটা দেখা যাচ্ছে সেটা আসলে ‘অ্যাসাসিনস ক্রীড: থ্রী’ গেমের ইনট্রো। গেমটা থেকে পাতি ঝেঁপে দিয়েছে! – সে ভালো কথা, ঝাঁপবে না কেন, ঝাঁপুক। কিন্তু তার মানে আমিও পড়ানো শেষ হলে এদের ক্লাসে একদিন অ্যাসাসিনস ক্রীডের ‘রেডিওঅ্যাকটিভ’ ট্রেলারটা দেখাবো। ‘রেডিওঅ্যাকটিভ’ একটা গান, মার্কিন রক ব্যান্ড ইমাজিন ড্রাগনস-এর গাওয়া। সেটাকে গেমের ফুটেজের সাথে পাঞ্চ করে এই ট্রেলারটা বানানো হয়েছিল। এবার ভিডিও যেহেতু মার্কিন মুক্তিযুদ্ধের, মায় জর্জ ওয়াশিংটন অবধি দূরবীন নিয়ে হাজির, তখন আমি তো এটা ‘সরস রেফারেন্স’ হিসেবে দেখাতেই পারি, তাইনা?

পরের ক্লাসে সেটাই করব। টোটাল্যি নন্টে অ্যাটিচ্যুড – ‘দেখাচ্ছি!’

——————————————————-

* ওপরে ‘ইয়ে’ বলতে ‘আগ্রহ’ বোঝানো হয়েছে।
——————————————————————————————————-

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *