People have a right to get stoned.
আক্কেল গুড়ুম হওয়ার অধিকার চাই।
অবাক হওয়ার অধিকার চাই। প্রতিদিন কেড়ে নিচ্ছে, অল্প অল্প করে।
আজকেই ভাবছিলাম পাঁচুদার কথা। ভাবছিলাম আর অবাক হচ্ছিলাম।
আঁকার ক্লাসে গোলমাল করলে (করতামই) প্রথমে বলতেন – ‘এবার তোমায় ঘুঁষি মারব।’ তারপর বাইরে বের করে দিয়ে বলতেন – ‘কালার স্টাডি কর।’
ক্লাস ফাইভের আকাট বাচ্চা আমরা, – আমাদের পাঁচুদা কালার স্টাডি করতে বলতেন। আমগাছ আর অর্জুনগাছের সবুজের তফাত ধরতে শেখাতেন।
নিবেদিতা কলা মন্দির। আমাদের গান-আঁকা শেখার ক্লাস। কেন নিবেদিতা, সেই ইতিহাস এখনকার ইতিহাস বইয়ে তো নেই। ভারতমাতার প্রথম মানুষী চিত্রায়ন যাঁর হাতে, সেই অবনীন্দ্রনাথের শিল্পসঙ্গীনি ছিলেন নিবেদিতা। – এই কলা মন্দিরে আঁকার ঘরে একটা বড় কাঠের বোর্ড মতো ছিল। নীচে পায়া লাগানো, দেওয়ালে টাঙাতে হয় না, নিজেই দাঁড়ায়। এই বোর্ডে সারি সারি আমাদের আঁকা ছবি আটকানো থাকত। এই বোর্ডটার গায়ের কাপড়ের রঙ ছিল লাল। একটু অন্যরকমের একটা লাল।
পাঁচুদা আমাদের শিখিয়েছিলেন – ওই লালটার নাম ইন্ডিয়ান রেড। একটা অদ্ভুত লাল। শান্ত, মাটির মতো।
আমাদের বায়োলজি স্যার রাহাদা। রাহাদার সারা ভারত ঘোরা ছিল। এক বছর রাহাদার জন্মদিনে পাঁচুদা একটা কার্ড এঁকে দিয়েছিলেন নিজে হাতে। সেই কার্ড আমাদের রাহাদা বায়ো ল্যাবে বসে গল্প করতে করতে দেখিয়েছিলেন।
কার্ডটায় একটা সবুজ ছোপ ছিল। একদম আলাদা একটা সবুজ। কী করে পাঁচুদা বানিয়েছিলেন পাঁচুদাই জানেন। রাহাদা আমাদের সেই ছোপটা দেখালেন। দেখিয়ে বললেন – “পাঁচুদার রঙের সেন্স কী অদ্ভুত অসাধারণ, তোরা এখন বুঝবি না। আমারও ভালো ধারণা ছিল না। আজকে এই কার্ডটা পাবার পর এই সবুজ রঙটা দেখে আমি পাঁচুদাকে জিজ্ঞেস করলাম, পাঁচুদা, এই সবুজটা কী সবুজ? এর কি কোনো নাম আছে? – পাঁচুদা প্রথমটা বললেন, – সেরকমভাবে তো কোনো নাম নেই। – তারপর একটু ভেবে বললেন, – অজন্তা গ্রীন বলা যেতে পারে। – আমি ভেবে দেখলাম, সত্যি তো! অজন্তার গুহাচিত্রে যে সবুজ দেখেছিলাম, এই সবুজ অবিকল সেই সবুজ।”
এই পাঁচুদার ক্লাস আমি করেছিলাম। আমিও।
ভাবছিলাম আর অবাক হচ্ছিলাম…….