লোমশ শরীরের মাহাত্ম্য জীবনে দ্বিতীয়বার গভীরভাবে উপলব্ধি করিলাম।
ঘনসন্নিবিষ্ট লোমজালে বন্দী হইয়া দুষ্ট পলায়নোন্মুখ মশক বহু প্রয়াস সত্ত্বেও উড্ডীয়ান হইতে পারে না, – তাহাকে পৈশাচিক আনন্দ সহযোগে চপেটাঘাত পূর্বক নিধন করা যায়; – এই তত্ত্ব পূর্বেই অবগত ছিলাম। আজ নূতন পাঠ পাইলাম।
মিষ্টান্ন খরিদ করিতে গিয়াছিলাম। হৃষ্টচিত্তে ফিরিতেছি, সহসা ঊর্ধ্ব হইতে জনৈক ক্ষুদ্র খেচর আমার হস্তোপরি কিয়ৎপরিমাণ অপাচ্য খাদ্যাবশেষ ত্যাগ করিল। চমকিত হইয়া আক্রান্ত দেহভাগের প্রতি দৃষ্টিপাত করিলাম। চমৎকৃত হইয়া দেখিলাম, নখাগ্রপরিমাণ লঘুভার মলকলঙ্ক আমার ত্বক স্পর্শ করে নাই, – লোমরাজি কর্তৃক বাধাপ্রাপ্ত হইয়া শূন্যে উত্থিত হইয়া ভাসমান আছে। বলপূর্বক হাত ঝাড়া দিলাম। অনাহুত উপদ্রব উৎক্ষিপ্ত হইয়া পথধূলামধ্যে বিলীন হইল।
অতঃপর হৃদয়ঙ্গম করিলাম, জন্মাবধি আমাশরীরে ত্বকপ্রহরায় নিযুক্ত এই লোমযূথের গুরুত্ব ভাষায় ব্যাখ্যা করিবার নহে। সৃষ্টির গতলগ্নে প্রলয়পয়োধিজলে মীনদিগের দেহে যাহা শল্ক, ধরিত্রীর যৌবনকালে মহাকায় সরীসৃপকুলের বপু আচ্ছাদন করিয়া যাহা বর্ম, নভশ্চর পক্ষীদিগের উত্থানের পশ্চাতে সর্বপ্রধান অভিযোজন হইয়া যাহা পর্ণ, সেই বিচিত্ররূপধারী প্রোটীনকুলতিলক কেরাটিনই মানব তথা সমগ্র স্তন্যপায়ীগণের শরীরে কেশরূপে বিরাজমান। যুগে যুগে জীবশরীরে অঙ্গরূহ হইয়া ইহাই প্রাণের রক্ষক।
ভো নির্লোম চিক্কণ দেহধারী মনুষ্য! আমি তোমাপেক্ষা সহস্রগুণ মহত্তর। অবলোকন কর, আমি কীরূপ দুর্ভেদ্য আবরণে আবৃত, কীরূপ অক্ষয় অলঙ্কারে সজ্জিত। জগদীশ্বর তোমার উপর সদয় হউন, তোমার ত্বকের নগ্নতা নিবারণ হউক। হরি ওঁ।